মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নব নির্বাচিত  যে কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজ করে স্বস্তি পাবেন, তার একটি হলো ইন্দো-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। ১০ বছরে এ সম্পর্ক ছিল ধারাবাহিকভাবে উর্ধ্বমুখী। এমন মন্তব্য করা হয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক ওয়েবসাইট সিকিউরিটি-রিস্কস-এর একটি বিশ্লেষণীতে। এতে বলা হয়, গত বছরের জুনে ১০ বছর মেয়াদী ডিফেন্স ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্টের নবায়ন করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর। এর প্রায় এক বছর পর স্বাক্ষরিত হয় লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ সমঝোতা স্মারক (এলইএমওএ)। ওবামা প্রশাসনের নেওয়া একটি বড় উদ্যোগ হলো ডিফেন্স টেকনোলোজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (ডিটিটিআই)। এই ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ অ্যাশটন কার্টার ব্যাক্তিগতভাবে ধাবিত করেছেন।
বিশ্লেষণীটিতে আরও বলা হয়, ডিটিআই-এর মূল উদ্দেশ্য হলো ১) দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে একিভ’ত করা, যা শুধু স্বতন্ত্র কৌশলগত সিদ্ধান্তেই সীমিত থাকবে। এতে আমলাতান্ত্রিক বাধা বা অকর্মন্য প্রক্রিয়া থাকবে না। ২) প্রচলিত ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্ক থেকে আরও বেশি সহযোগিতামূলক সম্পর্কে গিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্প ভিত্তিকে শক্তিশালী করা। ৩) সহ-উন্নয়ন ও সহ-উৎপাদনের ভিত্তিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র বের করা। ৪) ইন্দো-মার্কিন ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।
সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও প্যানেট্টাই তৎকালীন সহ প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টারকে ২০১২ সালে ডিটিটিআই নিয়ে চিন্তা করতে বলেছিলেন। নিজে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার পর কার্টার নিজেই এ প্রকল্প আগ্রহ সহকারে এগিয়ে নিয়ে যান। ডিটিটিআই’র অধীনে বেশ কয়েকটি যৌথ গ্র“প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্লেষণীতে বলা হয়, চ্যালেঞ্জ হলো যুক্তরাষ্ট্র খুঁজছে বাণিজ্য, আর ভারত চায় প্রযুক্তি। এ কারণে ডিটিটিআই’র দুই ‘টি’ বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাণিজ্য তথা ‘ট্রেড’ আগে রাখতে, আর ভারত চায় প্রযুক্তি অর্থাৎ ‘টেকনোলজি’কে আগে বসাতে।
অনেক প্রকল্পের আয়ু নির্ভর করে ব্যাক্তিত্বভেদে। তাই প্রশ্ন উঠে, অ্যাশটন কার্টার পেন্টাগন থেকে বিদায় নেওয়ার পর কি এই প্রকল্প টিকে থাকবে? কারণ, ট্রাম্পের দল হবে পুরোপুরি নতুন। আর এ দল বেছে নেওয়ার কাজে সময়ও ব্যয় হচ্ছে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে। আমেরিকান ও ভারতীয় পক্ষে নেতৃত্বও সফলতা নির্ধারনের বড় প্রভাবক। আবার রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায়ও সংঘাত বাঁধতে পারে। এ সহযোগিতা ইদানিং ভালোই এগুচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প ও পুতিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, যার বিপরীতটা হতে পারতো হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হলে, তা ভারতের জন্য সহায়ক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রতিযোগিতায় হয়তো ভাটা পড়বে। অনেক কিছুই নির্ভর করবে ভারত সরকারের যোগাযোগ ও ভ’-গোয়েন্দা ক্ষেত্রে বুনিয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার ওপর।
ট্রাম্প পুরোদস্তর একজন ব্যবসায়ী। নিজের সূচনা বক্তব্যে তিনি নিজেই বলেছেন, লেনদেনের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়া হবে তার প্রথম কাজ। ট্রাম্প প্রেসিডেন্সির সময় ইন্দো-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বিস্তৃতভাবে বলা যায় বর্তমান সম্পর্কের বিস্তার হিসেবে। উচ্চ পর্যায়ের ধারাবাহিক সংলাপ থেকে শুরু করে যৌথ মহড়া চলতে পারে, পাশাপাশি ডিটিটিআই নিয়ে আরও অগ্রসর হতে হবে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র চাইবে কম্যুনিকেশন্স ইন্টারোপেরাবিলিটি ও সিকিউরিটি সমঝোতা স্মারক (সিসমোআ) ও বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট ফর জিও-স্প্যাশিয়াল কোঅপারেশন (বিইসিএ) স্বাক্ষর করতে।
অপরদিকে ভারত উন্নত প্রযুক্তি চাইবে। প্রিডেটরের মতো উচ্চ প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আগ্রহ আছে দেশটির। ভারত আরও চায় একটি যুদ্ধবিমান কারখানা অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে নিয়ে আসতে। এসব উদ্দেশ্য পূরণে প্রত্যেক দেশ কত অর্থ খসাতে প্রস্তুত, তার ওপরই নির্ভর করবে আগামীতে অর্জনের গতি?

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031