বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতি মামলার নজর এখন পুরান ঢাকার বকশিবাজারে। সেখানে অবস্থিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতেই রায় ঘোষণা হচ্ছে ।

এই রায়কে ঘিরে সারা দেশেই টানটান উত্তেজনা। কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা চারপাশে। নেমেছে বিজিবিও। আদালত এলাকা ও আশেপাশের নিরাপত্তা আরও বেশি।

বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টারও কিছু আগে থেকেই এই এলাকায় উপস্থিত হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য সংখ্যা।

প্রথমে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা আসলেও পরে আসতে থাকেন সাদা পোশাকে পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশের সদস্যরা। আছে বিজিবিও।

বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করা হয় আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত প্রাঙ্গনে। বাকিদের নিয়োজিত করা হয় বকশিবাজার মোড়সহ আশপাশের সড়কে।

আদালতে প্রবেশে আজ মোট তিনটি আর্চওয়ে রাখা হয়েছে। একটি আছে আলিয়া মাদ্রাসার গেটে, একটি মাঠে ঢুকার প্রবেশপথে এবং একটি আদালত কক্ষের প্রবেশ পথে। তিনটি গেটেই তল্লাশি শেষে ঢুকার অনুমতি মিলছে।

তবে গোটা এলাকাতেই সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কেবল আদালত চত্বর নয়, বকশিবাজার মোড় থেকে আলিয়া মাদ্রাসার দিকে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বকশিবাজারের আশপাশের সব দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।

বকশিবাজার মোড়ে দেখা গেছে পুলিশ, র‌্যাবে পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের একাধিক গাড়ি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের গাড়িও আছে।

তবে গণমাধ্যমকর্মীদের আদালতের ভেতরে যেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তারা অনুমতি দিলে প্রবেশ করতে পারছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। আর আদালতে ঢুকার আগে সাংবাদিকদেরকে নাম তালিকাভুক্ত করে রাখা হচ্ছে।

এই মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে যারা এসেছেন, তাদেরকেও আদালতে ঢুকতে পড়তে হচ্ছে তল্লাশি ও জেরার ‍মুখে।

খালেদা জিয়া যে পথ ধরে আদালতে যাবেন, নিরাপত্তার কড়াকড়ি আছে তার পুরোটা জুড়েই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের লুপ থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এই রায়কে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে নানা ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ স্পষ্ট। পুলিশের ধরপাকড়, বিএনপির আন্দোলনের হুমকি, আওয়ামী লীগের পাল্টা হুঁশিয়ারিতে ছড়িয়েছে উত্তেজনা।

আর রায়ের দিন সকাল স্বাভাবিকের তুলনায় সকাল থেকেই রাজপথ ফাঁকা অনেকটা। কর্মদিবসে গুলিস্তান এলাকা ভোরেই কর্মব্যস্ত দেখা গেলেও আজ দেখা গেছে উল্টো চিত্র। মানুষ নেই বললেই চলে। যানবাহন চলছে নির্বিঘ্নে।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায় সরকারের আমলে ২০০৮ সালে ৩ জুলাই বিদেশ থেকে এতিমখানার নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান এবং আরও চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

প্রায় ১০ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ হয় গত ২৫ জানুয়ারি। মোট ২৩৬ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে শুনানি।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়া ও অন্য পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, জাল নথির ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। রায়ের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছেন নূন্যতম আইনের শাসন থাকলে তিনি বেকসুর খালাস পাবেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031