প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রশাসনের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল সেটি গোপন কোনো তথ্য নয়। সে সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এগিয়ে আসার ফলে ভারতের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ানোর পরিকল্পনাও ছিল।

ওই সময় পাকিস্তানের সেনা শাসক ইয়াহিয়া খান ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো কটূক্তি শুনতে চাইতেন না নিক্সন। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান মিত্র হিসেবে তখন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

সম্প্রতি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকার বিরোধিতায় রিচার্ড নিক্সন যেসব যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন তার কিছু গোপন নথি অবমুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ক্লেমেন্টসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতোর সঙ্গে এক বৈঠকে নিজের এই অবস্থান তুলে ধরেছিলেন নিক্সন।

১) যুদ্ধে ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপ একটি ‘বাজে নজির’ স্থাপন করবে এবং ছোট দেশগুলোর ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

২) মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সহায়তাকে সামরিক শাসনে থাকা ছয় কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি মানুষের বড় দেশ ভারতের গণতান্ত্রিক সরকারের সামরিক পদক্ষেপ আখ্যা দেন নিক্সক।

৩) সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে ভারত যদি প্রতিবেশী কোনো দেশে আগ্রাসন চালায় তাহলে বিশ্বের সব ছোট দেশের ভবিষ্যতই হুমকির মুখে পড়বে বলেও ধারণা করেন নিক্সন।

৪) বৈঠকে জাপান সরকার ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সয়ায়তায় আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু শরণার্থীদের জরুরি সহায়তার বিষয়ে তার প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ‘ইতিবাচক’ হলেও ওই সহায়তা যুদ্ধের খরচ যোগাতে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কায় তাতে আপত্তি জানায় মার্কিন কংগ্রেস।

৫) বাংলাদেশে যেহেতু ‘নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার মত স্থায়ী’ একটি সরকার তখনো চালু করতে পারেনি। তাই নিক্সন মনে করেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আরও সময় নেওয়া উচিত।

৬) রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা নারীরা বিপজ্জনক বলে মনে করেন নিক্সন। ভারত (সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী) ও ইসরায়েল দুই দেশই নারীর নেতৃত্বে যুদ্ধে জড়িয়েছে।

৭) জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে নিক্সন একটি রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন। সেখানে শরণার্থীদের জন্য ৫০ কোটি ডলারের ত্রাণ সহায়তা এবং ইয়াহিয়া খানকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানোর কথা ছিল। কিন্তু ভারত সে সময় ‘নিজেদের স্বার্থকেই’ গুরুত্ব দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। নিজের দেশের আইন লংঘন হবে জেনেও সাড়ে চার দশক আগে তিনি যে মুক্তিকামী বাঙালিদের দমনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সমরাস্ত্র যুগিয়েছিলেন, তা পাঁচ বছর আগে প্রকাশিত ‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম: নিক্সন, কিসিঞ্জার অ্যান্ড আ ফরগটেন জেনোসাইড’ বইয়ে সবিস্তারে উঠে আসে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031