সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

istaik_rza1_119666

ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল নির্ধারিত সময়ের আগে, অনেকটা তড়িঘড়ি করে ঢাকা ঘুরে গেলেন । গুলশান ঘটনার পরপর মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে যে ধরনের প্রচার আর প্রকাশনা চলছে, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয়না, দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর এই দেশের এজেন্ডায় বাংলাদেশ তালিকার উপরের দিকেই।

নিশা দেশাই বিসওয়াল এমন এক সময় এলেন যখন তার নিজের দেশের ডালাসে কৃষ্ণাঙ্গদের বিক্ষোভ চলছে। এক কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে খুন হয়েছে পাঁচ পুলিশ আর আহত হয়েছে আরো ছয় জন। ওরল্যান্ডো গণহত্যার রক্তের দাগও শুকায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনায় বাংলাদেশ। তাদের পরামর্শ শুনতে হবে, স্বীকার করতে হবে বাংলাদেশে তাদের সৃষ্ট আইসিস আছে।

যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশে আইসিসের অবস্থানের কথা বলে আসছে। তবে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অফিসার ও পরবর্তী সময়ে ইউএসএইডে কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু তনয় হত্যার পরপরই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নেয়। নিশা দেশাই তখনও ঢাকা এসেছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ফোন করেছিলেন।

গুলশান আর শোলাকিয়ার ঘটনা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মন্তব্য প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করছে মার্কিন পত্রপত্রিকা। সিএনএনের পর্দায়ও ব্যাপক উপস্থিতি বাংলাদেশের। নিশা দেশাই বরাবর যা বলেন এবারও বলেছেন যে, জঙ্গিবাদ নির্মূলে বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এবং এবারও বাংলাদেশ সরকারকে মনে করিয়ে দিতে ভুলেননি যে, জুলহাজ হত্যা তদন্তের শেষ দেখতে চায় ওয়াশিংটন।

অনেকদিন থেকেই নানা বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে তা বলা যাবেনা। জিএসপি সুবিধা বাতিল হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়।  এখন এর সঙ্গে যোগ হলো জঙ্গি প্রশ্নটি। যখন বাংলাদেশ সরকার বারবার বলে আসছে বাংলাদেশে আইসিস নেই, সেখানে মার্কিন অবস্থান স্পষ্ট ‘বাংলাদেশে আইসিস আছে’। বাংলাদেশ সরকার এবারও বলছে সন্ত্রাস আর জঙ্হিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে বদ্ধ পরিকর শেখ হাসিনার সরকার।

এমনটা বললেও খোদ সরকারের ভেতরে গুলশান আর শোলাকিয়ার ঘটনা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। জঙ্গিবাদের শেকড় কতটা গভীরে, তা এত দিন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে দেশের পুলিশ ও প্রশাসন আন্দাজ করতে পারেনি। কূটনৈতিক এলাকায় জিম্মি করার ঘটনা, এমনকি আত্মঘাতী হিসেবে জঙ্গিদের আত্মপ্রকাশ নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে জনমনে। সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার বলার চেষ্টা করছে, এবারও করেছে বলেই ধারণা করছি যে, আইসিস আছে কি নেই, সেই বিতর্কে না গিয়ে জঙ্গিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। নিশা দেসাইকে আশ্বস্ত করা হয়েছে জঙ্গিবাদের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পৃক্ততা পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।

এখন দেখতে হবে, এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কতদূর যায়। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলছে, বাংলাদেশ স্বীকার করুক এদেশে আইসিস ও আল কায়দা আছে। বাংলাদেশের নিজের অবস্থান এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাসীকে তো বটেই, দেশের মানুষকেই সরকার একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে পারেনি, সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কতটা দৃঢ়। জঙ্গি দমনের নামের হাজার হাজার গ্রেফতার, ক্রসফায়ার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকার বা দেশ সম্পর্কে কোন সুবার্তা দেয় না।

সরকারের নানা পর্যায়ের ব্যক্তিরা জঙ্গি প্রশ্নে সবসময় পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা বলে থাকেন। গুলশানের ঘটনায়ও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। এর বাইরে জঙ্গি দমন কৌশল নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তি বাড়ায়ই না, এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তি বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলার সুযোগ পায়।

বুঝতে পারা কঠিন নয় জঙ্গিবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ আরও বাড়ল। এ চাপ কি বাংলাদেশ কতটা সামলে চলবে আগামী দিনে তাই দেখার বিষয়। নিশা দেশাইয়ের সফরের পর বাংলাদেশ জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ কী তার পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশ কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোটে যোগ দেবে? একসাথে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশ নিজের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করতে পারবে? এসব প্রশ্নের জবাব এখনই পাওয়া যাবেনা।কিছুদিন অপেক্ষা করি তাহলে।

লেখক: পরিচালক বার্তা, এখাত্তর টেলিভিশন

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031