প্রথম ম্যাচের চেয়ে আজ মঙ্গলবার এক রানের কম টার্গেট ৩২৩ রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ম্যাচটি প্রায় জিতেই নিচ্ছিল তারা। প্রথম ম্যাচে ১৬৯ রানে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করল জিম্বাবুয়ে। শেষ তিন বলে তাদের দরকার ছিল ১২ রান। একটি ছক্কা মেরে তা নামিয়ে আনে ৬ রানে। হাতে দুই বল দুই ইউকেট।

জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান তিরিপানো যেভাবে একের পর এক চার-ছক্কা মারছিলেন, তাতে ম্যাচটি তাদের ঝুলিতে যাওয়া তখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত সেটি হয়নি।  ৮ উইকেটে ৩১৮ রান তুলতে পারে তারা। টানটান জমাট ম্যাচটি ৪ রানে জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল টাইগাররা।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে একই স্টেডিয়ামে।

আজ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি এমন জমজমাট হয়ে উঠবে  জিম্বাবুয়ের ইনিংসের মাঝামাঝিতেও মনে হয়নি। ব্যাটিংয়ে নেমে ২২৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল সফরকারীরা। অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন দ্রুতই গুটিয়ে যাবে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং। কিন্তু সফরকারী দলের দুই টেলএন্ডার ব্যাটসম্যানরা ঝড় তুলে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন। অষ্টম উইকেট জুটিতে ৮০ রানের পার্টনারশিপ করেন মুতোমবোদজি-তিরিপানো।

শেষ ৩০ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৭৭ রান। তাদের হাতে ছিল ৩ উইকেট। আল-আমিনের করা ৪৬তম ওভার থেকে তিরিপানো-মুতোমবোদজি মিলে ১৬ রান নেন। শফিউলের করা ৪৭তম ওভার থেকে তারা নেন ২০ রান। ৪৮তম ওভারে আল-আমিন এসে দেন ৭ রান। ৪৯তম ওভারে শফিউল দেন ১৪ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২০ রান। এই ওভারে আল-আমিন ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন।

ম্যাচটিতে জিম্বাবুয়ের চারজন ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৬৬ রান করেন সিকান্দার রাজা। মাধিভেরের ব্যাট থেকে আসে ৫২ রান। ৫১ রান করেন ওপেনার কামুনহুকামউই। ৯ নম্বর পজিশনে নেমে ২৬ বলে ২টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৫৫ করে অপরাজিত থাকেন ডোনাল্ড তিরিপানো। ২১ বলে ৩৪ করেন মুতোমবোদজি।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৩টি উইকেট নেন। অন্যদের মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা ১টি, শফিউল ইসলাম ১টি ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১টি ও আল-আমিন হোসেন ১টি করে উইকেট নেন।

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আজ টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩২২ রান করে বাংলাদেশ। টাইগার ওপেনার তামিম ১৩৬ বলে ২০টি চার ও তিনটি ছক্কায় ১৫৮ রান করে নিজের নতুন রেকর্ড গড়েন। এর আগে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ১৫৪ রান করেছিলেন তামিম। তার এই স্কোরটি ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের স্কোর। আজ ১৫৮ রানের ইনিংস খেলে নিজের সেই রেকর্ড ভাঙেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের দিক থেকে সেরা দশটি ইনিংসের মধ্যে তামিমেরই আছে ৬টি।

এদিন তামিম ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকেন। ৪২ বলে পূরণ করেন ব্যক্তিগত অর্ধশত। ১০৬ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। সেঞ্চুরি করার পর তিনি যেন আরো ভয়ানক হয়ে ওঠেন। ১৩২ বলে তামিম ১৫০ রান পূরণ করেন।

ব্যক্তিগত ১৫০ রান করার পর ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে লং-লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের রেকর্ড ভাঙেন তামিম। এই ওভারের চতুর্থ বলে লং-অফে মুতোমবোদজির হাতে ক্যাচ হন তিনি। ওয়ানডেতে ২৩ ইনিংস পর সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। ওয়ানডেতে তামিমের এখন মোট সেঞ্চুরি ১২টি।

দলের বড় স্কোর করায় অবদান আছে মুশফিকুর রহিমেরও। ৫৫ রান করে আউট হন তিনি। ১৮ বলে ৩২ করে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ মিথুন। মাহমুদউল্লাহ ৪১ করে আউট হয়ে যান। জিম্বাবুয়ের বোলারদের মধ্যে মুম্বা ২টি, টিশুমা ১টি, তিরিপানো ২টি ও মাধিভেরে ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ফল: ৪ রানে জয়ী বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ইনিংস: ৩২২/৮ (৫০ ওভার)

(তামিম ১৫৮, লিটন ৯, শান্ত ৬, মুশফিক ৫৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, মিথুন ৩২*, মিরাজ ৫, মাশরাফি ১, তাইজুল ০, শফিউল ৫*; মুম্বা ২/৬৪, টিশুমা ১/৩৫, তিরিপানো ২/৫৫, মাধিভেরে ১/৩৮, সিকান্দার ০/৫৯, উইলিয়ামস ০/৩৫, মুতোমবোদজি ০/৩৪)।

জিম্বাবুয়ে ইনিংস: ৩১৮/৮ (৫০ ওভার)

(কামুনহুকামউই ৫১, চাকাভা ২, ব্রেন্ডন টেইলর ১১, উইলিয়ামস ১৪, মাধিভেরে ৫২, সিকান্দার ৬৬, মুতুম্বামি ১৯, মুতোমবোদজি ৩৪, তিরিপানো ৫৫*, মুম্বা ০*; মাশরাফি ১/৫২, শফিউল ১/৭৬, মিরাজ ১/২৫, আল-আমিন হোসেন ১/৮৫, তাইজুল ৩/৫২, মাহমুদউল্লাহ ০/২২)।

ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031