দেশে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন যুদ্ধ শুরু হলো । বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমদিনই টিকা নিয়েছেন ২৬ জন। তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’ ওয়েবসাইটের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৪তম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলো বাংলাদেশে। বুধবার বিকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বহু প্রত্যাশার টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশে এই টিকাদান কার্যক্রমের শুরু হয়। পরে একে একে আরো ২৫ জনকে টিকা দেয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার কুর্মিটোলাসহ আরে চারটি হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে ড্রাই রান বা পরীক্ষামূলক টিকা দেয়া হবে।

সারা দেশে শুরু হবে ৭ই ফেব্রুয়ারি।

বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে এখনও করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু করতে পারেনি, সেখানে ‘সীমিত শক্তির’ বাংলাদেশে এই কার্যক্রম শুরু করাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঁচজনকে টিকা দেয়া দেখেন প্রধানমন্ত্রী। অপর চারজন হলেন-কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা, পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক সদস্য  মো. দিদারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। এরপর আরো ২১ জন এবং সবমিলে ২৬ জন টিকা নেন প্রথম দিন।

টিকা নিতে ভয় পাচ্ছেন কি না সে বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তাদের সাহস যোগান, সশরীরে অনুষ্ঠানে থাকতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সেইসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন, আল্লাহ্‌র কাছে এইটুকু শুকরিয়া আদায় করি যে, আমরা সময়মতো এই ভ্যাকসিনটা ক্রয় করতে পেরেছি, আনতে পেরেছি এবং তা আজকে প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষকে আমরা সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, এরপর সারা দেশে টিকা দেয়া শুরু করা হবে, যাতে দেশের মানুষ তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্য সুরক্ষা পায়। উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। টিকার সমস্যা হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আমরা যে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডোজ কিনেছি তার মধ্যে ৫০ লাখ এসে গেছে। এরপর থেকে বাকি টিকা আরো আসতে থাকবে। কাজেই এই ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে না। টিকা সংগ্রহ ও টিকাদান সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন। কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এখনও শুরু করতে পারেনি। সেখানে আমাদের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ সীমিত অর্থনৈতিক শক্তি নিয়েই আমরা কিন্তু মানুষের কল্যাণে যে কাজ করি- সেটাই আজকে এর প্রমাণ।  এ সময় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল প্রান্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেশে প্রথম ভ্যাকসিন নিলেন যারা: প্রথম দিনে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন ২৬ জন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা প্রথম ভ্যাকসিন নেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আরো ২৫ জন টিকা গ্রহণ করেন। ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, মতিঝিল জোনের ট্রাফিক পুলিশ মো. দিদারুল আলম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। এরপর টিকা নেন সানজিদা সুলতানা, মো. আব্দুল হালিম, মো. এনামুল হাসান, মো. হামজা, শাম্মী আকতার, ডা. আল মামুন শাহরিয়ার সরকার, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন, ডা. আফরোজা জাহিন, অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদের খান, মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, মো. আব্দুর রহিম, কাজী জসিম উদ্দিন, মোশারফ হোসাইন, মাসুদ রায়হান পলাশ, মো. আল- মাসুম মোল্লা,  আমিরুল মোমেনিন, মিম মুন্নি খাতুন, মো. আশিফুল ইসলাম, দেওয়ান হেমায়েত হোসাইন। প্রথম দিনের তালিকায় ৩২ জনের নাম থাকলেও তাদের ৩ জন অনুপস্থিত ছিলেন। বাকি তিনজনের ভ্যাকসিন দেয়া যায়নি তাদের সমস্যার কারণে।

অনেক মন্ত্রী, এমপি, সচিব ভ্যাকসিন নেবেন: গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই করোনা ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে আমরা একটি ছোট অনুষ্ঠান করে দেশব্যাপী টিকাদান শুরু করবো। দেশের অনেক মন্ত্রী, এমপি, সচিব ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই টিকা নিতে চাচ্ছেন। সেদিন আপনারা দেখতে পারবেন। আপনারা কবে টিকা নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন আমরা সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে পারবো। ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক, পুলিশদের দেয়ার পর আমরা নেবো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। নীতিমালা তৈরি হলে, সে অনুযায়ী যোগ্য হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে তো টিকাদানে আসতেই হবে। তিনি আরো বলেন, ভ্যাকসিনের অভাব হবে না। ভ্যাকসিন আসতে থাকবে।

অনলাইনে শুরু হয়েছে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন: গতকাল থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ টিকার জন্য নিবন্ধন। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন- সকল সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনা, জাতীয় অধ্যাপকবৃন্দ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, বরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল থেকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সুরক্ষা অ্যাপে (ংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনের জন্য আবেদন করতে পারবে। এ ছাড়াও করোনার টিকার জন্য আবেদন করতে পারবে রাষ্ট্র পরিচালনার নিমিত্ত অপরিহার্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিনিধিগণ (সকল ধর্মের), মৃতদেহ সৎকার কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তি, জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেল, বিমান ও নৌ-বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জাতীয় দলের খেলোয়াড়, ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিকগণ এবং ৫৫ বছর ও তদূর্ধ্ব সকল নাগরিক।

আজ ৫টি হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচি: আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১০০ জনসহ আরো ৪টি হাসপাতালে টিকা দান কার্যক্রম চলবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ৬০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২০০ জন ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ৬০ জনকে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালকরা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টিকা দেয়া কার্যক্রম চলবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031