প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে প্রতিঘাত করার মতো সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ সশস্ত্র
বাহিনীর সদস্যদের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। গতকাল মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে, ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি)-২০২০ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি )-২০২০ এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। আইএসপিআর’এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানায়, এ বছর ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২০ এ (এনডিসি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩১ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চার কমোডর এবং একজন ক্যাপ্টেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাঁচজন এয়ার কমোডর রয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনী অফিসারদের পাশাপাশি দু’জন অতিরিক্ত সচিব, ১১ জন প্রশাসনের যুগ্ম সচিব এবং সিভিল সার্ভিসের অন্যান্য ক্যাডার, বিদেশি পরিষেবা থেকে একজন মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ পুলিশের দুইজন উপ-মহাপরিদর্শক এতে অংশ নিয়েছিলেন। ১২টি বন্ধু দেশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল/কর্নেল এবং সমমানের পদমর্যাদার ২৫ জন সদস্যও অংশগ্রহণ করেন। এ বছর আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে তিনজন কর্নেল এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, দু’জন ক্যাপ্টেন এবং ছয়জন কমান্ডার বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে সাত গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং একজন উইং কমান্ডার অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে আমাদের দেশে তাদের প্রায় ১০ লাখের ওপরে নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কখনো সংঘাতে যাইনি এবং আলোচনার মাধ্যমে এটা সমাধানের চেষ্টা করছি এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সকলকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি-এই যে বিশাল একটা বোঝা আমাদের ওপর রয়েছে-এটার যেন তারা দ্রুত সমাধান করেন। জাতির পিতার করে যাওয়া দেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এর পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছে। সবথেকে বড় কথা আমাদের দেশের উন্নতি করতে হবে। তার জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে যেখানে এবং যাদের কাছ থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়া যায়, প্রযুক্তি জ্ঞান পাওয়া যায়, সেটুকু নিয়েই আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই কথাটা মনে রাখতে হবে, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমরা রাখবো। শেখ হাসিনা বলেন, নিজের দেশের নিরাপত্তা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত থাকবে এবং আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি এবং সে কারণে সারাবিশ্বে আজকে আমরা মর্যাদা পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। এর সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে আমরা পৌঁছে দিতে চাই। চলমান মুজিববর্ষ থেকে আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপনকালীন দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ভূমিহীন, গৃহহীনকে অন্তত একটি করে ঘর করে দেয়ায় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার আহ্বানেরও পুনরুল্লেখ করেন। ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে আপনারা গড়ে তুলবেন। যেন সবসময় জনগণের পাশে থেকে জনগণের কল্যাণে কাজ করেন। নবীন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে স্ব-স্ব কোর্স সম্পন্ন করে আপনারা আজকে স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগ দেবেন। আপনাদের জীবন সফল হোক, আমি সেটাই চাই। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী যে, এনডিসি তার প্রশিক্ষণে উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের গ্রাজুয়েটগণ আপনারা আপনাদের অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি এবং অঙ্গীকারকে সামনে রেখে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল, টেকসই, উন্নয়ন আত্মনির্ভরশীলতা সর্বপরি গৌরবময় অবস্থানের দিকে নিয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা যেন কখনো ব্যর্থ না হয়। আমাদের দেশকে যেন উন্নয়নের উচ্চ শিখরে নিয়ে যায়। সারাবিশ্বের কাছে সবসময় আমরা যেন মাথা উঁচু করে বিজয়ী জাতি হিসেবে চলতে পারি। আপনারা যেখানেই যাবেন বিজয়ী জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে চলবেন। অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সমপ্রীতি গড়ে তুলতে এনডিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৩৭টি বন্ধুপ্রতীম দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যগণ এনডিসিতে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং পরবর্তীতে তাদের নিজ নিজ দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনডিসিতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আপনারা রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন সমস্যা ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন, যার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়োগ নিঃসন্দেহে নিজ দেশের জাতীয় অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে বেগবান করবে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনারা অবশ্যই কোর্সে অমূল্য জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশি সহযোগীদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং পেশাদার সম্পর্কের বাইরে সামাজিক বন্ধন এবং বন্ধুত্ব অবশ্যই গড়ে উঠেছে। তিনি আরো আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বিদেশি প্রশিক্ষণার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে তাদের হৃদয়ে বাংলাদেশ এবং এর জনগণের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করেছেন তা নিয়ে স্ব-স্ব কর্মস্থলে গিয়েও এই দেশের জন্য শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করবেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031