এক ভয়ঙ্কর ঝড়ের পূর্বাভাস বাংলার মানচিত্রে আগামী মে’তে । বিধানসভার ভোট। ১০ বছর আগে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর তৃণমূল কংগ্রেস। এবার ভোটে তারা পাঁচ বছরে অদম্য শক্তি হয়ে ওঠা বিজেপি’র চ্যালেঞ্জ এর সামনে। মমতা বনাম বিজেপি’র এই লড়াইয়ের সম্ভাব্য ফল নিয়ে মানবজমিনের আলোকপাত। আজ দ্বিতীয় কিস্তি। কলকাতা থেকে লিখেছেন জয়ন্ত চক্রবর্তী।
বুধবার কলকাতার রানী রাসমণি রোডের বিশাল কৃষক সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে এককালের দাপুটে সিপিএম নেতা, নিমতা লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক বিজয় বসু বললেন, বামেদের ডাকা সমাবেশে
এত লোক হয় কিন্তু ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন ঘটে না কেন? বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতোই এই রহস্যের সমাধান এখনও অধরা সিপিএম’র কাছে। বস্তুত, ব্রিগেডে যে কোনো বাম মিটিংয়ে ভিড় উপচে পড়ে।
বামদের পদযাত্রায় ভিড় হয়। কিন্তু দু’হাজার এগারো সালের পর বামদের ভোটবাক্স তাদের প্রত্যাখ্যান করে। একুশের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর তৃণমূল এবং বিজেপি’র সঙ্গে সমদূরত্ব রাখছে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আখেরে কি চিঁড়ে ভিজবে? কসবার সিপিএম প্রার্থী যুবনেতা শতরূপ ঘোষ সোজা কথা বলার লোক। তিনি বললেন, পশ্চিবঙ্গের মানুষ দশবছর মমতা ইউফোরিয়ায় ভুগেছে. এবার তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তাতে কি বামদের কোনো সুবিধা হবে? শতরূপ বলছেন, মানছি বিজেপি গত তিন বছরে শক্তি সঞ্চয় করেছে। কিন্তু এই সামপ্রদায়িক দলটি সম্পর্কে বাংলার মানুষ যে একদম সচেতন সেই সম্পর্কে অন্য বাম নেতাদের মতো বিশ্বাসী শতরূপও। তরুণ যুবনেতা শতরূপ যেমন বিশ্বাস করেন তৃতীয় বিকল্প খুঁজছে মানুষ, পলিতকেশ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও আস্থা রাখছেন মানুষে। তার মূল্যায়ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কুশাসনে জেরবার বাংলার মানুষ বুঝেছে এই শাসনের অবসান দরকার, বিজেপি যে আরো ভয়ঙ্কর শক্তি সেটাও বাংলার মানুষ জানে। এই অবস্থায় তৃতীয় শক্তির উন্মেষ চাই। বাম নেতারা যতই তৃতীয় শক্তি চাই বলে বাজার গরম করুন। আসলে বামদের বিশ্বাসযোগ্যতা যে তলানিতে ঠেকেছে- তা এই দশবছরেও ফেরেনি। নেতৃত্বে তারুণ্যের অভাব, আন্দোলনবিমুখতা আর গ্রহণযোগত্যার অভাব বামেদের ক্রমশই জনমানস থেকে হারিয়ে দিয়েছে। মিরাকলের মতো একুশের ভোটে তা ফিরে আসবে তা কষ্টকল্পনাতেও ভাবা যায় না। একুশের ভোট যে মমতা বনাম বিজেপি হতে চলেছে তা উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে থাকা বামনেতারা বুঝতে না চাইলেও তথাকথিত সামপ্রদায়িক দল বিজেপি’র ভোট শেয়ার এই বাংলায় যেভাবে বেড়েছে তাতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ার যথেষ্ট কারণ আছে। দু’হাজার ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র আসন তিন, ভোটশেয়ার তিন শতাংশের মতো। দু’হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিয়াল্লিশটি আসনের মধ্যে আঠারোটি পায় বিজেপি। ভোটার শেয়ার প্রায় চল্লিশ শতাংশ। সুতরাং বিজেপি যে একুশের নির্বাচনে প্রধান শক্তি তা বলাই বাহুল্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের আসল ভরসা সংখ্যালঘু ভোট। সেখানেও থাবা বসাতে আসাউদ্দীন ওআইসি’র মিম হাজির বাংলার ভোট মঞ্চে। সুতরাং এবারের বাংলার ভোট জমজমাট। যুদ্ধ সমাসন্ন। বাতাসে বারুদের গন্ধ।
