কাতালোনিয়া স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এলাকা । দেশটির অন্যতম খনিজ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অঞ্চল এটি। তার রাজধানী বার্সেলোনা। যে শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব ‘বার্সেলোনা’। এই শহরে এস্পানিওল ও জিরোনা’র মতো ক্লাবও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে স্পেন থেকে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করছে কাতালোনিয়া। স্বাধীনতার বিষয়ে একাধিকবার তারা গণভোটের দাবি করেছে। তবে এবার চলছে জোর প্রস্তুতি। আগামী ১লা অক্টোবর কাতালোনিয়া অঞ্চলের মানুষের এই এলাকা স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট দেয়ার কথা রয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে আসন্ন ওই গণভোটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্পেনের আদালত। তবে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আবেদন করবে অঞ্চলটির স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করা নেতারা। তারা ১লা অক্টোবর গণভোট আয়োজনের পক্ষে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্বাধীনতার প্রশ্নে আসন্ন গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক নানা মতামত ও উত্তেজনা রয়েছে। বিশ্বের নানা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য কাতালোনিয়ার ‘স্বাধীনতা’ নিয়ে হয়তো অতোটা চিন্তা নেই। কিন্তু তাদের চিন্তা অন্যখানে। কাতালোনিয়া স্বাধীন হলে সেখানকার বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সেলোনা কোথায় খেলবে। এখন তারা খেলে স্প্যানিশ লা-লিগায়। যেখানে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ। এই দুই ক্লাবের মধ্যকার এল-ক্লাসিকো এখন পর্যন্ত ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই। কিন্তু কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে লীগে তাদের দেখা হবে নাকি আলাদা লীগে খেলবে। বিষয়টি নিয়ে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ দুইভাবে বিভক্ত। এক দল মনে করছেন, কাতালোনিয়া স্বাধীন হলেও বার্সেলোনার উচিৎ হবে স্প্যানিশ লা-লিগায় খেলে যাওয়া। তা না হলে বার্সেলোনা তাদের আগের ফুটবলীয় মর্যাদা হারাবে। অন্যদিকে আরেক পক্ষ মনে করছে, কাতালোনিয়া অঞ্চলে আরেকটি নতুন লীগ চালু করা হবে। নাম হবে ‘কাতালান প্রিমিয়ার লীগ’। সেখান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা দেশ হিসেবে তারা ইউরোপিয়ান ফুটবলে অংশগ্রহণ করবে।
বার্সেলোনা যদি স্প্যানিশ লা-লিগায় না খেলে তাহলে ক্লাবটি তাদের এতদিনের মর্যাদা হারাবে বলে মনে করেন লীগের প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস। আর অঞ্চলটি স্বাধীন হলে তিনি কোনো মতেই বার্সেলোনাকে লা-লিগায় খেলতে দেবেন না বলেও জানালেন। এছাড়া রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জিনেদিন জিদান বার্সেলোনাকে ছাড়া লা-লিগার কথা চিন্তাও করতে পারছেন না। ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জিনেদিন জিদান এই লড়াইটার সমাপ্তি দেখতে চান না। এতে অন্য ফুটবল দর্শকদের মতো তিনি নিজেও কষ্ট পাবেন বলে জানালেন। ইউরোপিয়ান ফুটবল অনেক আকর্ষণ হারাবে বলেও মনে করেন তিনি। জিদান বলেন, ‘কাতালোনিয়া স্বাধীনতা অনেক বড় বিতর্কের একটি বিষয়। কী হতে যাচ্ছে, আমি জানি না। আশা করছি, লা-লিগা যেন ভেঙে না যায়। বার্সেলোনা সবসময় লা-লিগার অংশ থাকুক- সেটাই আমি চাই। বার্সেলোনা ছাড়া আমি লা-লিগার কথা কল্পনাই করতে পারি না। ক্লাবটি লা-লিগায় না খেললে বিশ্বের অগণিত ফুটবল ভক্তদের মতো আমিও অনেক কষ্ট পাবো।’ অন্যদিকে লা-লিগার প্রেসিডেন্ট হােিভয়ের তেবাস বলেন, ‘কাতালোনিয়া যদি স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে সেখানকার ক্লাব লা-লিগায় খেলতে পারেব না। অনেকে বলছেন, স্বাধীন হয়ে গেলেও বার্সেলোনার সামনে দু’টি সুযোগ থাকবে। তারা ইচ্ছা করলে লা-লিগায় খেলতে পারবে, অন্যথায় নিজেদের লীগে খেলবে। তাদের এমন কথায় আমি অবাক হচ্ছি। কাতালোনিয়া স্বাধীন হলে সেখানকার কোনো ক্লাব লা-লিগায় খেলতে পারবে না। তবে আশা করছি, এমন ঘটনা ঘটবে না। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে পারবো।’ তেবাস আরো বলেন, ‘বার্সেলোনা লা-লিগায় না খেললে তারা তাদের রঙ হারাবে। কাতালান লীগ যদি হয় তাহলে বার্সেলোনা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি নিশ্চিত, তারা এখনকার মতো টেলিভিশন স্বত্ত্ব পাবে না। ইউরোপের বড় ক্লাবের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তারা হারাবে।’
সূত্র: স্পেনের ক্রীড়া দৈনিক ‘মার্কা’ ও ‘এএস’
