মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন বেশ আগে থেকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ধরে নিয়ে দলের । পিছিয়ে নেই বিএনপিপন্থী পেশাজীবী নেতারাও। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক আমলা, সেনা কর্মকর্তা, চিকিৎসক, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক। অর্ধশতাধিক পেশাজীবী নেতা আগামী নির্বাচনে আগ্রহী বলে জানা গেছে।

আগ্রহী এসব প্রার্থী নিজেদের লাইমলাইটে আনতে নিয়মিত দলের কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নিচ্ছেন। ঈদসহ নানা পার্বণে তারা নিজ এলাকায় পোস্টার, ফেস্টুন দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন জনগণকে।

নির্বাচনে আগ্রহের বিষয়ে তাদের দাবি, দলের দুঃসময়ে যখন বিএনপির নেতারা মাঠে থাকতে পারেননি, তখন নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। জিয়া পরিবারের পাশে থেকেছেন। নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে দল তাদের এই অবদান বিবেচনায় রাখবে বলে আশা করছেন তারা।

এদিকে গত কাউন্সিলের পর বিএনপির নতুন কমিটিতে এসব পেশাজীবীর অনেকে জায়গা করে নিয়েছেন।

পেশাজীবী নেতাদের সূত্রে অন্তত ৫০ জন পেশাজীবীর নাম পাওয়া গেছে যারা আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন।

আইনজীবীদের মধ্যে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন সিনিয়র আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন (বরগুনা-২), সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যন মহাসচিব অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন (বরিশাল-৩, মুলাদী-বাবুগঞ্জ), বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন (নোয়াখালী-১, চাটখিল), সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-২, বোদা-দেবীগঞ্জ), ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১, কলমাকান্দা-দূর্গাপুর), অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান (ময়মনসিংহ-১, হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া), অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার (বরিশাল সদর), ব্যারিস্টার শাহজান ওমর বীর উত্তম (ঝালকাঠি-১), অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া (নরসিংদী-৩, শিবপুর) আসনে মনোনয়ন চাইবেন।

চিকিৎসকদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান (সিলেট-১, সদর) থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাব মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-৬, বিরামপুর-হাকিমপুর-নবাবগঞ্জ-ঘোড়াঘাট), বিএনপির সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু (গাজীপুর-৩, শ্রীপুর-সদর), সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম লাবু (পিরোজপুর-২), ডা. শাহাদাত হোসেন (চট্টগ্রাম, বাকলিয়া), বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন (ত্রিশাল, ময়মনসিংহ), ডা. মহসিন জিল্লুর (চট্টগ্রাম-১৪, চন্দনাইশ-সাতকানিয়া), কর্নেল (অব.) আব্দুল মজিদ (লক্ষ্মীপুর-২), প্রফেসর ডা. রফিক চৌধুরী (সুনামগঞ্জ -১, ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দলের ক্রান্তিকালে নিরলসভাবে কাজ করেছি। এখনো করছি। ভবিষ্যতেও করব। আশা করি অবশ্যই দল এসব বিবেচনায় রাখবে। আগামী দিনে জনগণের জন্য আরো বেশি কাজ করতে চাই।’

ব্যবসায়ীদের মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ হান্নান (চাঁদপুর-৪, ফরিদগঞ্জ), ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক (চাঁদপুর-৫ হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি), ইঞ্জিনিয়ার আফজালুর রহমান সবুজ (শরীয়তপুর-৩, ডামুড্যা-গোসারঘাট-ভেদরগঞ্জ), ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু (দিনাজপুর সদর), ইঞ্জিনিয়ার মুনসেফ আলী (সুনামগঞ্জ-৫, ছাতক-ফোয়ারা বাজার), মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান (টাঙ্গাইল-৪, কালিহাতি), সাবেক আমলা ড. জালাল উদ্দিন ( চাঁদপুর-২, মতলব), সাবেক সচিব ও আইজিপি এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী (চট্টগ্রাম-৪, সীতাকুন্ড), ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১, মিরসরাই), শিল্পপতি আবুল কালাম (চৈতি কালাম) (কুমিল্লা-৯, লাকসাম), শিল্পপতি সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, নাসিরনগর), দৈনিক আমার দেশের পরিচালক শাকিল ওয়াহেদ সুমন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, কসবা-আখাউড়া), ব্যবসায়ী নেতা এস এম ফজলুল হক, ব্যারিস্টার মীর হেলাল (চট্টগ্রাম-৫, হাটহাজারী) ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ শুভও একই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।

ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন আগামী নির্বাচনে তরুণ ও ক্লিন ইমেজের লোকদের মনোনয়নে প্রাধান্য দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী এলাকা বিএনপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দল মনোনয়ন দিলে আশা করি এই আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে পারব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আখতার হোসেন ও ব্যবসায়ী রোটারিয়ান জসিম উদ্দিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৭, রাঙ্গুনিয়া), শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া (ঢাকা-৫, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়েদ ইসলাম (বাগেরহাট-৪), কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন (নীলফামারী-৪, সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ), সাবেক সচিব ও আইজিপি আব্দুল কাইউম (জামালপুর -১), সাবেক সচিব আবদুল হালিম (জামালপুর -২), সাবেক সচিব ব্যারিস্টার হায়দার আলী (শেরপুর -২), মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী (ঢাকা-১৭, গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট) মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সাংবাদিকদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ (কুমিল্লা-৫, বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া), জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী (চট্টগ্রাম-২, ফটিকছড়ি), সিনিয়র সাংবাদিক মামুন চৌধুরী (মামুন স্ট্যালিন) নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

তবে চট্টগ্রাম-২ থেকে সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিক মামুন চৌধুরী (মামুন স্ট্যালিন) ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এই দলের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। ছাত্রদলের রাজনীতি করেছি। আমার বাবা চৌধুরী মোতাহার হোসেন সংসদ সদস্য ছিলেন। আমিও বাবার দেখানো পথ অনুযায়ী এলাকার জনগণের পাশে থাকতে চাই। তাদের জন্য কিছু করতে চাই।’ সাম্প্রতিক বন্যায় মামুন স্টালিনকে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে।

কাদের গনি চৌধুরী নির্বাচন করতে চান বিএনপির সাবেক প্রভাবশালী নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আসন থেকে। মানবতাবিরোধী মামলায় তার ফাঁসির পর ফটিকছড়ি বিএনপি এক অর্থে দিশেহারা ও স্থবির হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।  আগামী নির্বাচনের সাকা চৌধুরীর পরিবার থেকে কাউকে মনোনয়ন না দিলে সম্ভাবনা বাড়বে কাদের গনির।

কাদের গণি চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশের জনগণের সেবা করার ইচ্ছা থেকেই রাজনীতিতে এসেছি। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকতে চাই। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে সমাজের সার্বিক মুক্তি আনাই আমার লক্ষ্য।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031