যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বিএনপির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসাকে দলটির আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন । ঢাকাটাইমসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অবশ্যই আসবে এবং আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করবে।

আলোচিত এই নারী নেত্রীর সাক্ষাৎকারের আজ প্রথম পর্বে থাকছে সাম্প্রতিক রাজনীতি ও সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভাবনা।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

বর্তমানের রাজনৈতিক পরিবেশ ভালোই আছে। সব রাজনৈতিক দলই তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে আগামীতে একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। বিএনপি বিগত নির্বাচনে যে ভুল করেছিল, আগামী নির্বাচন সেই ভুল আর করবে না। আমরা নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তাহলে আপনার ধারণা আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসছে?

রাজনৈতিক দল টিকে থাকে নির্বাচনের মাধ্যমে। অতীতে বিএনপি যে ভুল করেছে, সেটা আর করবে না। আর তাদের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। আওয়ামী লীগও চায় সব দলের অংশগ্রহণের একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আরেকটি পজেটিভ দিক হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে বিএনপির সরে যাওয়া। নির্বাচনে অংশ নেবে বলেই হয়তো তারা এ দাবি থেকে সরে এসেছে। হয়তো রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার জন্য তারা এখন বিভিন্ন কথা বলছেন।

আপনারা কেন বলছেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে?

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত বিএনপি এমন কোন কর্মকাণ্ড করেনি যে জনগণ তাদেরকে ভোট দেবে। হয়তো তারা বলবে, দারা ক্ষমতায় ছিল না যে, জনগণের জন্য কিছু করবে। সেই ক্ষেত্রে আমি বলব, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। কিন্তু সকল দুর্যোগ, দুর্বিপাকে আমরা জনগণের পাশে ছিলাম। আর আন্দোলনও করেছি জনগণকে সাথে নিয়ে। জনগণ আমাদের সাথে ছিলো বলেই বিএনপির আজিজ মার্কা নির্বাচন প্রতিহত করতে পেরেছি আমরা। বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনও করেছি। বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার কিছুই নেই। তাকে থাকার জন্য রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটা বাড়ি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা দখল করে থানা বানিয়ে দিয়েছিল। এটি নিয়ে কিন্তু আমরা আন্দোলন করিনি। আমরা ক্ষমতায় আসার জনগণের দাবি আমরা পূরণ করতে পেরেছি। সার এখন কৃষকের দরজায় পৌঁছে যায়, দেশে পানি, বিদ্যুতে ভোগান্তি নেই।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশের জন্য কিছু করে নাই। আবার এখন ক্ষমতায় যেতে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। জনগণ এই অপকর্ম রুখে দাঁড়িয়েছে। আর অতীতে বিএনপি ভোট পেত ধর্মের নামে অপপ্রচার করে। তারা তখন বলত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে, দেশ ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে উলুধ্বনি বাজবে। কিন্তু এখন সেই অপপ্রচার করতে পারবে না। কারণ মানুষ এখন সচেতন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে। তাই ধর্মীয় খাতে অনুদান বেড়েছে। তাই তাদের এ বিভ্রান্ত করতে পারবে না। আমরা মনে করি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য আগামীতেও জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।

এবার আসি আপনার প্রতিষ্ঠান নিয়ে। যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠার পটভূমি?

জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে গড়েছেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পরে। নির্বাচনের ফল দেয়ার আগেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর উপর হামলা শুরু করে তারা। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে। এরপর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলো। তারা যেখানেই যেত পুলিশ তাদের আটক করার জন্য ওৎ পেতে থাকে। সেই সময় নেত্রী আমাদের বললেন, ‘তোমরা যারা ছাত্রলীগ করেছ তাদের মাঠে থাকা দরকার।’

তাঁর নির্দেশ পেয়েই আমরা কমিটির একটি স্ট্রাকচার দাঁড় করলাম। ১০১ সদস্যের কমিটি জমা দিয়েছিলাম কিন্তু প্রথমদিকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য অনেককেই পাওয়া যায়নি। বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের ভয়ে তারা মাঠে আসেনি।

২০০২ সালের ৬ জুলাই যখন এ সংগঠনটি জন্ম নিল, তখন একটি সদ্য জন্ম নেয়া শিশু। যার হাত নাই, পা নাই কিছুই নাই। কারণ সংগঠনগুলো একটা কাঠামো তৈরি করাই থাকে কিন্তু যুব মহিলা লীগের কিছুই ছিল না। শুরু থেকেই আমাদের কর্মী সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু এই কম সংখ্যক কর্মীরাও অত্যাচার হতে রেহাই পায়নি।

প্রথম দিকে আমরা মোহাম্মদপুর থানায় কমিটি করেছি। কিন্তু সেখানে গিয়েও আমরা নেতাকর্মীদের সংকট দেখেছি। যারা আওয়ামী লীগে করেন তারাও আমাদের বলতো, ‘এটা তো কোন সংগঠন হতে পারে না। দুর্যোগের সময় এটা কেন করছেন।’

কিন্তু আমাদের সাথে যাদের ভালো সম্পর্ক ছিল তাদের এনেছি। সেখানে ভালো দক্ষ দুই তিনজন সাংগঠনিক মেয়ে এবং তাদের মাধ্যমে আরও কয়েকজন নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করেছি। এভাবে বিভিন্ন থানার কমিটি করেছি। তাদের মধ্যে মোহাম্মদপুরের ডেইজি সারোয়ার, মিরপুরের সাবিনা আক্তার তুহিন, ধানমন্ডির নার্গিস মাহতাবকে বের করলাম। ওই সময়ে তারা সকল প্রকার ভয়ভীতি উপেক্ষা, শত অত্যাচারের মধ্যেও বিএনপির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এরই মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক পরিধি বাড়তে থাকে। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি হয়।

যুব মহিলা লীগের উদ্দেশ্য কি?

নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাদের সমঅধিকার আদায়। নারীদের উপর বৈষম্য আছে তা দূর করা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ধর্মীয় স্বাধীনতা, নারীদের মুক্তির জন্য যে কাজ করছেন তা বুঝাতে হবে। তাদের সন্তানদের জন্য আগামীতে কী করবেন তাও বলতে হবে।

১/১১ সময়ে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?

১/১১ সরকার আসার পর আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করা হয়েছিল। আমার স্বামীকে (অসীম কুমার উকিল) গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমার নামে মামলা দেয়া হয়েছিল। বাড়িতে সাতবার অভিযান করেছিল। তারপরও যেদিন নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমরা আদালত চত্বরে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছিল। তারা সাত মাস জেলে ছিল।

নেত্রীকে যখন সাবজেলে আনা হলো, তখন আমরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে আন্দোলন করেছি। আমাদের দেখা দেখি অন্যরাও দাঁড়িছিলেন। নেত্রীর মুক্তির জন্য আমরাই প্রথম স্বাক্ষর নিয়েছিলাম এবং আমরা তা তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছি। এছাড়াও আমারাই প্রথমই নেত্রী মুক্তির আন্দোলনে অবরুদ্ধ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছি। এটাই ছিল প্রকাশ্য কোন সমাবেশ।

আপনাদের সম্মেলন হয়েছে দুই মাস হতে চলল, পূর্ণাঙ্গ কমিটি কখন হবে?

পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটা খসড়া আমরা তৈরি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আরেকটু মোডিফাই করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। শীঘ্রই আমরা কমিটি ঘোষণা করব।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031