আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ- বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে । ঢাকার
ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের বিরোধিতার মধ্যে গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলা হয়। এর প্রতিবাদে গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। গতকালও রাজধানীর দুই মহানগরের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন সংগঠন। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগেও প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসব মিছিল-সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বিকাল ৩টায় যুবলীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এই সমাবেশ থেকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সমাবেশ থেকে যুবলীগের নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে যুবলীগ রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয়। এ সময় যুবলীগের সমাবেশ থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাড়া, মহল্লা, মসজিদ, মাদ্রাসায় বসে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কোনো অপতৎপরতায় লিপ্ত হয় কিনা সে দিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি গুলিস্তান, নূর হোসেন স্কয়ার, পুরানা পল্টন মোড় প্রদক্ষিণ করে। এরপর মিছিলটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। একই সময় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ ছাড়া কৃষক লীগ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে মিছিল করে। এ সময় যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরাও মিছিলে অংশ নেন। একই সময় বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ের পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল করে শাহবাগ থানার অন্তর্গত ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। এখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন। এই সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাড়া ও ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয় এবং মিছিলটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে। ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান বক্তারা।
ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর ও অবমাননাকারীদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি করে সংগঠনটি। এর আগে মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজুতে এসে জড়ো হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ মহানগর নেতৃবৃন্দ। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি ভাস্কর্য ভাঙচুর ও অবমাননাকারীদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করেনি, রাতের অন্ধকারে ওই পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা যেমন করে বাংলাদেশে হানা দিয়েছিল, সেই পাকিস্তানি বাবাদের কথা শুনে যারা জাতির পিতার ভাস্কর্যকে অবমাননা করেছে, সেই কুলাঙ্গারদের যেখানে পাবেন তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেয়ার আগে এদের গণপিটুনি দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেবেন। তারপর পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আরো বলেন, ভাঙচুরকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তোরা রাতের অন্ধকারে আসিস না, বাবুরা। তোরা দিনে আয়। সামনে এসে কথা বল। আমি একা তোদের মোকাবিলা করবো। আমি আল নাহিয়ান খান জয় একাই একশো। এ সময় লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আপনারা কথায় কথায় হুমকি দেন। আপনারা বলেন, এদেশে নব্বই ভাগ মুসলমানদের দেশ। কিন্তু নব্বই ভাগ মুসলমানের নিরানব্বই ভাগই আপনাদের বিরোধিতা করে। আপনাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের অবজ্ঞা করে। তাহলে এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস বলেন, পিটুনি দেন- সব ঠিক হয়ে যাবে। ২০১৩ সালের ৫-৬ই মে হুজুরদের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছিল, তখন মাথা ঠিক হয়েছিল। এখন মাথা আবার নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবারো ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় হয়ে গেছে।
