খাগড়াছড়িতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গত ৬ই জুলাই থেকে টানা বৃষ্টিতে । পাহাড় ধস ও সড়কে পানি ওঠায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন রয়েছে। এদিকে পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি কমে গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও পাহাড় ধসের আশঙ্কায় কাটেনি আতঙ্ক। টানা ৮ দিনের বৃষ্টিতে পুরো জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় দূর্গতদের নেয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে।

বন্যা পরবর্তী খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, জেলা পরিষদ, পৌর প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার, শুকনা খাবার, বিভিন্ন ত্রাণ এবং ওষধ বিতরণ করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর জেলায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে ৪৫ হাজার ট্যাবলেট ও পানির জার সরবরাহ করেছে।

নদী ভরাট হওয়ার কারণে একটানা কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেই খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনি নদী পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে প্রতিবছর বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় খাগড়াছড়িবাসীর। এজন্য চেঙ্গী ও মাইনি নদী খননের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।

খাগড়াছড়িতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থাকলেও খাল ও নদ-নদী পরিদর্শনের কোন খবর তারা রাখে না।

খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, টানা বর্ষণ ও চেঙ্গী নদীর পানিতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বেচাকেনা একদমই নেই।

সরজমিনে দেখা যায়, প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মুসলিম পাড়া, সবজি বাজার, গঞ্জপাড়া, মেহেদী বাগ, মহিলা কলেজ, শান্তিনগর, বাসস্টেশন, মিলনপুর, অর্পনা পাড়া, শব্দমিয়া পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে দীঘিনালার মেরুং এর বিভিন্ন এলাকা ও মেরুং বাজারের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। পাহাড় ধস ও সড়কে পানি উঠায় বন্ধ রয়েছে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি-সাজেক ও দীঘিনালা-লংগদু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানছড়ির দুধকছড়া ব্রীজের একাংশ ধসে পড়ায় প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ধসে গেছে পানছড়ির ইউপি ভবনের একাংশ।

বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শত শত পুকুর, মৎস্য খামার ও ক্রীক বাধ ভেঙে যাওয়ায় মাছ চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ কে এম মোখলেছুর রহমান জানান, বিভিন্ন উপজেলার তথ্যমতে আনুমানিক দেড় কোটি টাকার পোনা মাছের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দীঘিনালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অবর্ণা চাকমা বলেন, কবাখালী, পাবলাখালী, মেরুং, বেতছড়ির বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় পুকুর ও ক্রীক ভেঙে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দীঘিনালা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, কবাখালী ও মেরুং এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র ও আত্মীয়দের বাড়িতেও আশ্রয় নিয়েছে হাজারও মানুষ। দূর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, দূর্গতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যে দূর্গতদের ৫০ মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে। দীঘিনালায় পাহাড় ধসে নিহত ব্যক্তির জন্য ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণসহ সকল প্রকার সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন খাগড়াছড়ির সাংসদ ও ট্রাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এ সময় খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনি নদীসহ অন্যান্য সকল নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং ও নদী শাসনের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031