প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে এই ভাইরাসের তান্ডব। গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে । এর সমাপ্তি কবে জানা নেই কারো। দিশেহারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। বিগত শত বছরেও এতোটা ভয়ঙ্কর সময় দেখেনি কেউ। ইন্টারনেট আর আধুনিক বিজ্ঞান কিংবা গবেষণাগার কোথাও মিলছে না স্বস্তির খবর।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানো এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। মৃতের সংখ্যা চার লাখ দুই হাজারেরও বেশি।
গত ৮ই মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাড়ে মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েক দিনে দেশে মৃত্যুর মিছিল নেমেছে। এছাড়া প্রতিদিনই বিনা পরীক্ষায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে অনেক লোক। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪২ জন । এটি বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৮৮৮ জনের মৃত্যু হলো। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরো দুই হাজার ৭৪৩ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৫ হাজার ৭৬৯ জনে।
এদিকে মোট সংক্রমণের বেশি ভাগ রাজধানী ঢাকার। ঢাকাসহ সারাদেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। তবে মানা হচ্ছে না কিছুই। কোথাও নেই সামাজিক দূরত্ব। নেই সচেতনতা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে এখনো সাধারণ মানুষের ভিড় লেগে আছে। মাস্ক পড়তেও অনীহা দেখাচ্ছে অনেকে। চায়ের দোকানে বসে আড্ডা আর একই পাত্রে একাধিক লোক চা পান করার দৃশ্য দেখা মেলে অহরহ। একসঙ্গে জড়ো হয়ে কেউ কেউ খোশগল্পও করছেন। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে প্রতিদিন লোকে লোকারণ্য থাকছে। কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। নেই হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা। বিভিন্ন স্থানে খালিপাত্র বসিয়ে রাখা হয়েছে। কোথাও নেই পানি। আবার কোথাও সাবান কিংবা স্যানিটাইজার নেই। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা কারোর-ই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এসব বাজারে কেউ বাজার করতে, আবার কেউ কেউ অকারণেই এসে ভিড় করছেন। এদের বেশিরভাগই একজন আরেকজনের শরীরে স্পর্শ করে দাঁড়াচ্ছে। অথচ করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার প্রধান উপায় হচ্ছে শারিরীক দূরত্ব বজায় রাখা। অথচ এ নিয়ে কারও মধ্যে কোনো উদ্বেগ নেই।
এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের আধিক্য বিবেচনায় করে সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রীণ জোনে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তিন ভাগে ভাগ করে তালিকা প্রকাশ করা হলেও এসব জোনের নাগরিকদের জন্য নতুন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ঢাকা মহানগরীর ৩৮টি এলাকাকে আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন বিবেচিত) হিসেবে দেখানো হয়েছে। ঢাকায় এখন পর্যন্ত কোনো এলাকাকে রেড জোন বিবেচিত হিসেবে দেখানো হচ্ছে না। ফলে রোববারও এসব এলাকার লোকজন যত্রতত্র চলাচল করেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেশের তিনটি বিভাগ, ৫০টি জেলা ও ৪০০টি উপজেলাকে রেড জোন (পুরোপুরি লকডাউন) দেখানো হয়েছে। আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন বিবেচিত) দেখানো হয়েছে দেশের পাঁচটি বিভাগ, ১৩টি জেলা ও ১৯টি উপজেলাকে। আর লকডাউন নয় (গ্রীণ জোন বিবেচিত) এমন জেলা দেখানো হচ্ছে একটি এবং উপজেলা দেখানো হচ্ছে ৭৫টি।
