রমরমা ব্যবসা চিকিৎসা নিয়ে চলছে । ডাক্তার না হয়েও অনেকে চেম্বার খুলে বসে আছেন। দিয়ে যাচ্ছেন ভুয়া চিকিৎসা। এরকম ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। নামের শেষে বাহারি ডিগ্রি লাগিয়ে এবং চকচকে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এরা নিরীহ মানুষের সাথে প্রতারণা করছেন।
এসব প্রতারক চক্রের ভুল চিকিৎসায় ও গাফিলতিতে বহু মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। তেমনই একজন বিকিরণ বড়ুয়া। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। দীর্ঘদিন ভবঘুরে জীবন কাটিয়েছেন। পরে চেম্বার খুলে বসেছেন ‘এমবিবিএস’ ডিগ্রিধারী ডাক্তার হিসেবে। নিজেকে পরিচয় দেন ডায়াবেটিস, মেডিসিন ও শিশুরোগের চিকিৎসক এবং কাস্টমসের মেডিকেল অফিসার হিসেবে।
র্যাবের সিনিয়র এএসপি মিমতানুর রহমান রোগী সেজে গিয়ে ধরে ফেলেন তার প্রতারণা। এসময় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন। এছাড়া এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গার বিজয়নগরে আয়েশা মেডিকেল নামে একটি ফার্মেসিতে গত ১৭ জুন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও র্যাব। একই সাথে ভেজাল ও অনুমোদনহীন বিভিন্ন ওষুধ বিক্রির অপরাধে বিকিরণ যে ফার্মেসিতে চেম্বার খুলেছিলেন সেই আয়েশা ফার্মেসির মালিক ফরিদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মিমতানুর রহমান জানান, কথিত ডাক্তার বিকিরণ বড়ুয়ার সন্ধান পাবার পর র্যাবের এক সদস্যের মাধ্যমে সোমবার সন্ধ্যায় চিকিৎসার জন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মিমতানুর রোগী সেজে আয়েশা মেডিকেলে বিকিরণের চেম্বারে যান। এসময় চেম্বারে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী ছিল, যার মধ্যে গর্ভবতী নারী ও শিশুও ছিল। মিমতানুরকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় তিনি বিকিরণের কাছে তার পড়ালেখা সম্পর্কে জানতে চান। এসময় তিনি এমবিবিএস পাস ও কাস্টমসের মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। কলকাতার একটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন বলে জানান। তবে প্রকৃত সনদ দেখাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত অনেক খুঁজে এইচএসসি পাসের সনদ দেখিয়েছেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে বিকিরণ দাবি করেন তার বিএমডিসি নিবন্ধন আছে। নম্বর ৯১১১৩। তবে আমাদের সঙ্গে থাকা সিভিল সার্জন অফিসের ডাক্তার ওয়াজেদ চৌধুরী অভি ওয়েবসাইটে খুঁজে এই নম্বরে বিকিরণের নাম পাননি। কাস্টমস হাউসে যোগাযোগ করে সেখানে কর্মরত থাকার তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো জানান, আয়েশা মেডিকেলের মালিক ফরিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে বিকিরণের ডাক্তার না হয়েও চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা দুজন যোগসাজশ করেই ফার্মেসির সঙ্গে চেম্বার খুলে রোগী দেখার ব্যবসা শুরু করে বলে জানায়।
র্যাব সূত্র জানায়, তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দণ্ডিত ভুয়া ডাক্তাররা স্বীকার করেন, টানা কয়েক বছর ধরে তারা অনেক জটিল, কঠিন রোগের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছিলেন। সেসব রোগীর ভাগ্যে কী ঘটেছে সে ব্যাপারে তারা কিছু জানাতে পারেননি। ভুয়া ডাক্তাররা প্রায়ই তাদের ব্যবসার স্থান পরিবর্তন করেন এবং কৌশলে সাধারণ মানুষকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চালান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাণিজ্যের লক্ষ্যে ভুয়া ডাক্তাররা নামের পেছনে এমবিবিএস ছাড়াও এফআরএসএইচ, এমএসিপি, এফএসিপি, পিজিটি, এমডি ও এফসিপিএস (ইনকোর্স) ও পার্ট-১ অথবা পার্ট-২ সহ বিভিন্ন ডিগ্রির কথা উল্ল্লেখ করেন। ভুয়া ডিগ্রির সঙ্গে লন্ডন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নামও উল্লেখ করা হয়। এ কারণে সাধারণ রোগীরা এসব ডাক্তারকে বিদেশি ডিগ্রিপ্রাপ্ত বলে মনে করেন। এত ডিগ্রি দেখে সরল মনে ভুয়া ডাক্তারদের দেখানোর জন্য ভিড় জমান। কমিশনের লোভে এক শ্রেণীর দালালচক্র অসহায় রোগীদের ওইসব ভুয়া ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। আর ভুল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্রায়ই রোগী মারা যায়।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
