প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০ দলের জোট ছিল জানিয়ে তাদের সঙ্গে বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটের আদর্শিক মিল খুঁজে পেয়েছেন।
৪৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসের বর্ণনা করতে গিয়ে ৭০ সালের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের সধ্যে ১৬৭ আসন নিয়ে গোটা পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি ছিল না।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করতে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। শুরু হয় যুক্তিযুদ্ধ। আর নয় মাসের যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সত্য হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে তাই ৭০ সালের নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়। ওই নির্বাচনের পরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।
এই নির্বাচনের আগেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভোটের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত ছিল। তবে আওয়ামী লীগবিরোধী ২০ দলীয় জোটের ওপর ভরসা করেছিল তারা।
সেই ইতিহাস বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানিরা খুব নিশ্চিত ছিল। তখনও ২০ দলীয় একটা জোট হয়েছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এখনকার মতোই ২০ দলীয় জোট ছিল। সব সময় একটা বিষকাঁটা। আমাদের ভাগ্যে সব সময় বিষকাঁটা জুটে।’
‘ওদের ধারণা ছিল ২০ দলীয় জোট যখন, অন্তত ৩০/৪০টা/৫০টা সিট তো পাবেই।’
‘ইয়াহিয়া খান ভেবেছিল যে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) কিন্তু জানতেন, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির (জাতীয় পরিষদ) দুইটা সিট হারাতে হবে। রেজাল্ট কিন্তু তাই হয়েছে।’
‘আর তখনই তারা পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্র শুরু করে, আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়নি।’
স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। আর এই চক্রান্তের অংশ হিসেবেই ১৯৭৫ সালে খুন হন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে স্বাধীনতাবিরোধীদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো, সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ বাতিল করে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে কেউ তাদেরকে মন্ত্রীর আসনে বসাতে পারে না।’
‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, চিহ্নগুলো মুছে ফেলা হয়েছে, ১৯টা ক্যু হয়েছে, সেনাবাহিনীতে যত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, একে এক সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। মনে হতো আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করি না। এমনকি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বলা যাবে না। হানাদার বাহিনী বলা হতো, পাক বা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বলা যেত না।’
‘৭ মার্চের ভাষণ আজকে আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলের স্বীকৃতি পেয়েছে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ, এই ভাষণও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নামটাও নেয়া যেত না।’
‘বাংলাদেশের নাম নিলেই তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম চলে আসে। ওই নাম বা ছবি আসলে টেলিভিশনে ঝিরঝির করে দেয়া হতো ওই ছবি যেন প্রচার না হতে পারে।’
‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতির পবির্তন হলো। ২০০১ সালেও তো একই অবস্থা তৈরি হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭৫ থেকে ৯৬, এই ২১ বছর তো এক কদমও আগাতে পারেনি, তা অর্থনৈতিকভাবে না সামাজিকভাবে না সাংস্কৃতিকভাবে।’
২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের অত্যাচার, জঙ্গি উত্থান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘অত্যাচার করে তারা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, স্বাধীনতার চেতনা নস্যাৎ করা, ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করা করেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কোর্ট শাস্তি দিয়েছে, আমরা কিছু করিনি। আমাদের যদি গ্রেপ্তার করতে হতো, যখন অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছিল, তখনই গ্রেপ্তার করতে পারতাম।’
‘কোর্টের রায়ও তারা মানবে না। বিএনপি জামায়াত আইন মানবে না, আদালত মানবে না, সংবিধান মানবে না, কিছুই মানবে না।’
‘ক্ষমতায় থাকতে যেমন স্বেচ্ছাচারিতা করছে, এখনও তেমন স্বেচ্ছাচারিতা করছে। ক্ষমতায় থাকতে মানুষ হত্যা করেছে, এখনও হত্যা করছে।’
ড. ইউনূসের সমালোচনা
পদ্মা সেতু নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস চক্রান্ত করেছিলেন, এই অভিযোগ আবার তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে লবিং করে পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের টাকা বন্ধ করিয়েছিলেন ইউনূস।
‘জাতির পিতা বলেছে, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, কাজেই আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি।’
‘তারা দুর্নীতির খোঁজার চেষ্টা করেছিল। বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিশেষ এজেন্সি হায়ার করে আমার বিরুদ্ধে আমার বিরুদ্ধে, আমার বোনের বিরুদ্ধে, আমার ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি খুঁজে পায় কি না, পায়নি।’
‘আবার সেই এমডি সাহেবও (ড. ইউনূস), তিনিও আমেরিকাকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছেন, না পেয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দোষারোপ করতে চেয়েছেন। আমি বলেছি তোমরা প্রমাণ কর। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার কোর্টে মামলা করেছিল, তারা বলে দিয়েছিল সব ভুয়া।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিবিদ হিসেবে কতটুকু দিয়ে যেতে পারলাম মানুষকে, কতটুকু করে যেতে পারলাম, আমার অ্যাকাউন্টে সেই টুকুই হিসাব।’
