নিকট আত্মীয় ৮ জন কনে তুলে আনতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন কমলগঞ্জের রূপসপুর গ্রামের মাওলানা আবু সুফিয়ানসহ । বর আবু সুফিয়ানসহ নিকট আত্মীয়দের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিটি পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেছে বর আবু সুফিয়ানসহ ৫ পরিবারের স্বপ্ন। কনে ঘরে তুলার পর অসুস্থ মা জরিনা বেগমকে চিকিৎসা   করানোর কথা ছিল আবু সুফিয়ানের। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সেসহ তার বাবা, চাচা, মামা, চাচাত ও মামাতো ভাইসহ ৮ জনের মৃত্যুতে প্রতিটি পরিবার এখন শোকে কাতর। কথা বলতে পারছিল না বাড়িতে থাকা মহিলা সদস্যরা। স্বামী সন্তান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে আহাজারি করছিলেন বর আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগম। পাশের ঘরে আহাজারি করছিলেন বরের চাচি অজুফা বেগম। পাশের মামা বাড়িতে মাতম চলছিল একই অবস্থায়। তাদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। তা দেখে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না।
রূপসপুর গ্রামের হাদিউর রহমান সরফরের বড় ছেলে মাওলানা আবু সুফিয়ান হলেন ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। ২০-২৫ দিন আগে বিয়ে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কনের পরিবার থাকতেন ঢাকার মহাখালীতে। শুক্রবার কনে তুলে আনার জন্য বাড়ি থেকে মাইক্রো কার নিয়ে সকাল ৭টার দিকে বের হন বর আবু সুফিয়ান, তার বাবা হাদিউর রহমান সফর, চাচা, মতিউর রহমান মুর্শেদ, চাচাতো ভাই, সাইফুর রহমান, চাচা হাজী আবদুল হান্নান, মামা দুরুদ মিয়াসহ নিকট আত্মীয়রা। কনে তুলে দেয়ার কথা ছিল ঢাকার মহাখালী বাসায়। ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের শশই এলাকায় এনা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাদের বহন গাড়িটি। এতে ঘটনাস্থলেই বরসহ ৭জন ও হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান অপর একজন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত জাকির হোসেন (১৮) ও কামরান মিয়া (২০) কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, কমলগঞ্জের মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রূপশপুর গ্রামের হাদিউর রহমান ওরফে সরফর মিয়া (৬০), ছেলে বর আবু সুফিয়ান (২৭), হাজী আবদুল হান্নান (৫৮), আলী হোসেন (১১), দুরুদ মিয়া (৫৫), মতিউর রহমান মুর্শেদ (৪২), মুক্তার চৌধুরী মুকিত (৬৫) ও মাওলানা সাইদুর রহমান সোহান (৩৬)।
বর আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়। কান্নার মধ্যে মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ছেন মাটিতে। চাচি অজুফা বলেন আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। প্রতিটি পরিবারের উপার্জনকনক্ষ সদস্যদের মৃত্যুতে ৫ পরিবারে নেমে এসেছে ঘন অন্ধকার। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031