প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। বৃটেনে চলতি সপ্তাহে করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। এক সপ্তাহে ৫০% বৃদ্ধির ফলে স্বাস্থ্য প্রশাসনে আতংক দেখা দিয়েছে। ৫ দিনব্যাপী ক্রিসমাসের শিথিলতার সুযোগে এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে এবং অনেক জীবনহানি ঘটতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
আজ বুধবার থেকে তৃতীয় বারের মতো লকডাউন শুরু হচ্ছে দেশের একটা বড় অংশে। গ্রেটার লন্ডনের অনেকগুলো বারসহ বেশ কিছু এলাকায় সর্বোচ্চ বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক জানান, লন্ডন ও আশপাশের তিনটি এলাকায় টায়ার-ত্রি তথা তিন স্তর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা চালু হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে লন্ডন সহ এসেক্স এবং হার্ডফোর্ডশায়ারের কিছু অংশ।
লন্ডনে গত এক সপ্তাহে প্রায় ২৪ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
নতুন বিধি নিষেধের আওতায় আসছেন ৬০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ। জনসাধারণকে টিয়ার থ্রি এলাকায় ভ্রমণে না আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।
মূলত উৎসব হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ২৩ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পাঁচ দিনের মধ্যে তিনটি পরিবারের সাথে দেখা করার সুযোগ রাখা হয়। টিয়ার থ্রি’র আওতায় পরিবারের সদস্য নয় এমন ৬জন ঘরের ভিতরে, প্রাইভেট গার্ডেনে বা আউটডোর ভেন্যুতে মিলিত হতে পারবে না। তবে খোলা জায়গা পার্কে ও সমুদ্র সৈকতে একত্রিত হতে পারবেন। এসময় বার, পাব, ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্ট সার্ভিস এবং অভ্যন্তরীণ ভেন্যুতে থিয়েটার বন্ধ থাকবে। শুধু টেকওয়ে সার্ভিস দেয়া যাবে।
ক্রিসমাসে ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসনের উপর চাপ বাড়ছে। অব্যাহত চাপের কারণে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অংশ স্কটল্যান্ড, ওয়েল্স এবং আয়ারল্যান্ড নেতাদের সাথে সংকট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেবিনেট মন্ত্রী মাইকেল মাইকেল গভ আজ স্কটল্যান্ডে নিকোলা স্টারজন, ওয়েলসের মার্ক ড্রেকফোর্ড এবং নর্দার্ণ আয়ারল্যান্ডের আর্লিন ফস্টারের সাথে ক্রিসমাসের বিধি নিয়ে আলোচনার জন্য ফোন করবেন।
কিন্তু সংকট আলোচনার অল্প আগেই নতুন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল জার্নালগুলি বিধি নিশেধ শিথিলকরণ পরিত্যাগের জন্য এক বিরল যৌথ সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। জনপ্রিয় মেডিকেল জার্নাল বিএমজে ও এইচএসজে সতর্ক করে দিয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অনেক জীবন বাঁচাতে হবে।
দুটি সমীক্ষা গতকাল সুপারিশ করেছে যে, জনসাধারণ প্রবলভাবে বিশ্বাস করে, এই বিধিনিষেধ আরো কঠোর করা উচিত। ইউগোভের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৫৭ শতাংশ উত্থান দমানোর পক্ষে। বিপরীতে ৩৭ শতাংশ শিথিলতা সমর্থন করেন। আর ইপসোস মরি‘র গবেষণায় দেখা গেছে ৪৯ শতাংশ মনে করেন বিধি নিষেধ যথেষ্ট কঠোর নয়।
মিস স্টারজান মঙ্গলবার বিকেলে বলেছিলেন, তিনি অন্য নেতাদের বৈঠকের জন্য অনুরোধ করেছেন। ক্রমবর্ধমান ভাইরাস সংক্রমন ও উত্থানের আলোকে বিধি নিষেধে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য। যাতে আরও সংক্রমন না হতে পারে। তিনি স্কটিশ পার্লামেন্টকে বলেছেন, তাঁর ‘স্থির দৃষ্টিভঙ্গি নেই তবে উৎসবে মিলিত হবার ক্ষেত্রে পরিবারের সময়কাল ও সংখ্যা হ্রাস করা উচিত। তিনি আরও বলেছিলেন, তার প্রশাসন ‘যথাযথ’ বলে মনে করে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মিঃ ড্রেকফোর্ড বলেছিলেন, শিথিলতার নিয়ম কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত মাত্র ৮ দিন যেতে না যেতে দেশ একটি ‘মারাত্মক অবস্থার’ মুখোমুখি হয়েছে।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বিধি নিষেধ আরোপের দাবিকে সমর্থণ করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, প্রধানমন্ত্রী এটা পরিবর্তন করবেন না, কারণ তিনি ‘ক্রিসমাস বাতিল’ দেখতে চান না। ট্যুরি এমপিরা ক্রমশ নার্ভাস হয়ে আছেন। স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারম্যান জেরেমি হান্ট বলেছেন, সরকার তাদের উদ্বেগ খুব মনোযোগ সহকারে শোনা উচিত।
