আমাদের বিচার ব্যবস্থায় স্পষ্টভাবেই বর্ণ বৈষম্য রয়েছে একটি বিষয় অবশ্যই আমাদের মাথায় নিতে হবে যে। এবং আমাদের এই চেষ্টার শুরু হবে স্পষ্ট এবং উচ্চস্বরে বলা যে, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার।’ বিষয়টি পরিষ্কার যে চার বছর পরও ফার্গুসন, মিসৌরি কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের নেপথ্যে ভূমিকা পালন করছে।
যদি আমরা খেয়াল করে দেখি, স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের তথ্য মোতাবেক সাজাপ্রাপ্ত চালকদের প্রায় ৮৫ ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ। সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী যখন একজন পুলিশ অফিসার কৃষ্ণাঙ্গ গাড়ি চালককে রাস্তায় থামায় তখন গাড়ি তল্লাশি করার সম্ভাবনা একজন শ্বেতাঙ্গের চেয়ে তিনগুণ বেশি। কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গ উভয়ই একই হারে মাদক নিয়ে থাকে কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ গ্রেপ্তারের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি। তারপর জামিনের ক্ষেত্রেও শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে তাদেরকে এক তৃতীয়াংশ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কৃষ্ণাঙ্গরা কোন অপরাধের জন্য শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ছয়গুণেরও বেশি কারাবন্দি হন। অভিযোগ প্রমাণের পর কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে গড়ে বিশ শতাংশ বেশি সাজা পেয়ে থাকে।
লাতিনদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এটি খুবই দুঃখজনক।
মানুষকে অবশ্যই বলতে হবে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’। তবে সচেতনতা ও সহমর্মিতাই যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে মানতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত বর্ণবাদ এ পরিণতির জন্য দায়ী। আমাদেরকে অবশ্যই এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নীতি এবং চর্চার পরিবর্তন আনতে হবে।
আমি যখন অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলাম তখন আমার তদন্ত ব্যুরোর প্রধান ল্যারি ওয়ালেসের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি। আমি তাকে বলি, আমি আমার এজেন্টদের জন্য বৈষম্যহীন বিচার নিশ্চিতে প্রশিক্ষণ চালু করতে চাই। বৈষম্যহীন বিচার সময়ের ওপর নির্ভর করে। আমাদের অবচেতন মন মানুষকে তার চেহারা দেখে একধরনের বিচার তৈরি করে। এ জন্য বেশির ভাগ বিচারক বিচারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ভাবার জন্য সময় নেয়। অপরাধকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তাই অনেকক্ষেত্রে বিচার নির্ধারণ করে দেয়। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাদের জীবন এ পেশাতেই উৎসর্গ করেছেন এবং শপথ নিয়েছেন। সেইসব পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে পুনরায় প্রশিক্ষণ দেয়া সহজ বিষয় নয়। এটাও সত্য যে, দিনশেষে তারা শুধু একমতই নন একই সঙ্গে তারা বিশ্বাস করেন এই প্রশিক্ষণ বিচার ব্যবস্থাকে সুসংহত করে।
ল্যারি এবং আমার বিশেষ সহকারী সুজি লোপটাস একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন এবং রাতজুড়ে পুলিশসহ অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। আমরা অকল্যান্ড এবং স্টকটন পুলিশ বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করি। এর উদ্দেশ্য ছিল নিরাপদ কমিউনিটি গড়ে তোলা। আমরা স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনিফার এবার হার্ডকে এই প্রোগ্রামের কার্যকারিতা বিশ্লেষণে নিয়ে এসেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম এ ধরনের কোর্স চালু করতে পেরেছিলাম।
আমাদের এই কোর্স থেকে আমাদের যে অর্জন তা কারও অজানা ছিল না। আমরা নিশ্চিতভাবে জানতাম যে, এটা শুধু বৈষম্য দূর করার বিষয় নয়- এর সঙ্গে সিস্টেমও জড়িত। আমেরিকায় বর্ণবাদ খুবই বাস্তব এবং পুলিশ বিভাগ এই বর্ণবাদের জন্য দায়মুক্তি পেতে পারে না। একই সঙ্গে আমরা জানতাম যে ভালো প্রশিক্ষণ সত্যিকারের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
এর মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাদের নিজেদের মধ্যে থাকা বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে জয় করতে পারবে। মানুষের মধ্যে তার যে চিন্তাভাবনা থাকে এবং সে যে চিন্তাভাবনা নিয়ে চলাফেরা করে সেগুলোকে প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে সঠিক পথে নিয়ে আসাই সব থেকে কঠিন বিষয়।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
