বড় রদবদল আসছে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে। ডিসেম্বরের মধ্যেই ২০ থেকে ২৫ জেলায় নিয়োগ হতে পারেন নতুন ডিসি। এমনকি উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যায়েও রদবদল আসতে পারে। সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ আভাস পাওয়া গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, যারা ইতোমধ্যে পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন তারা মুখিয়ে আছেন সরকারের নেক নজর পেতে। পদোন্নতির তালিকায় নিজের নাম দেখতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তারা। তারা প্রভাবশালী আমলা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে দক্ষতা-যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পাওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে দক্ষতা-যোগ্যতার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব ও মতাদর্শও দেখা হয়। এ কারণে চাকরিজীবনের শুরু থেকেই রাজনীতিকদের পেছনে দৌঁড়ানো শুরু করেন অনেক কর্মকর সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হলে বেড়ে যায় রাজনীতিকদের পেছনে দৌড়ঝাঁপ। আবার কোনো কোনো কর্মকর্তা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের কাছে ভিড়তে ইতস্তত করছেন। আবার কেউ কেউ পদোন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের কাছে মৌখিক তদবির করছেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ডিও লেটার নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা গেছে, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিবের পদ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) বৈঠক হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ দফায় পদোন্নতি নিশ্চিত করতে অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনী এলাকার কর্মকর্তাদের জন্য সুপারিশ করছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর একজন সদস্য এবং একজন মন্ত্রী ডিও লেটার দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা ও সুরক্ষা বিভাগের একটি প্রকল্প পরিচালকের জন্য পদোন্নতির সুপারিশ করেছেন। আগারগাঁও থেকে একজন মন্ত্রী আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মরত ২০তম ব্যাচের এক কর্মকর্তার জন্য। রাজশাহী বিভাগের একজন সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের জন্য।
সুপারিশ করা রাজনীতিকদের ভাষ্য, এসব কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদ পেলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে অবদান রাখতে পারবেন। তাদের কর্মস্পৃহা বাড়বে। তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলে যোগ্যতা ও মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হবে।
সুপারিশের এই প্রক্রিয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শামছুল আলম চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘এভাবে সরকারের পেশাজীবী আমলারা রাজনীতিকদের সুপারিশ আমলে নেওয়ায় প্রশাসন দলীয়করণের দিকে ঝোঁকে। নৈতিকভাবে
আমলারা রাজনীতিকদের সহমর্মিতা নিয়ে দক্ষতা ও যোগ্যতার বিচারে আস্থাহীনতায় ভোগেন। এ ধরনের চর্চা দীর্ঘ দিনের হলে প্রশাসনে দক্ষতার প্রতিযোগিতা থাকে না।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০-২৫ জেলায় নতুন ডিসি হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের অনেকের ‘ফিটলিস্ট’ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। যুগ্ম সচিব পদেও পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। ধারাবাহিকভাবে অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং জ্যেষ্ঠ সচিব পদেও পদোন্নতি দেওয়া হবে। এজন্য কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ গোপনীয় প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা অনুযায়ী যোগ্য কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পদোন্নতির বিষয়ে কয়েকটি বৈঠকও করে এসএসবি। বৈঠকে প্রত্যেকের কর্মজীবনের সব নথিপত্র পর্যালোচনা হয়। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনায় এসেছে।
