গায়ে হাত তুলতো। ‘রোজরাতে চোখের সামনে আমার দুলাভাই বোনটিকে খুব মারতো। ভাই হয়ে তার এই কষ্ট কখনো মেনে নিতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে রেখেছিলাম। আমি দোষী। আমি খুন করেছি।’
ঠিক এভাবেই নিজের বোনের স্বামীকে হত্যার পর থানায় এসে পুলিশকে কথাগুলো বলেছিলেন বাবুল ধর (২১)। সোমবার সকালে নিজ বাসায় বোনের স্বামী অঞ্জন ধর (৩৫) কে নৃশংসভাবে হত্যা করেন এই ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহের জের ধরে নিজের বোনের ওপর অঞ্জন ধরের নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় সহ্য করতে না পেরে তিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন।
সরজমিনে হত্যাকান্ডের খবর পাওয়ার পরপরই টেরিবাজারের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার একটি বাড়ীর ভেতর অঞ্জন ধরকে খুন করা হয়। ভগ্নিপতি বাবুল ধারালো একটি ছুরি দিয়ে তার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। থানায় এসে খুনের বিবরণ দেওয়ার পর পুলিশ বাবুলকে নিয়ে গিয়ে নিহত অঞ্জনের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে বাবলু ধর নামের ওই যুবক থানায় এসে ভগ্নিপতি অঞ্জন ধরকে খুন করার কথা জানালে হতবাক হয় দায়িত্বরত এসআই। এরপর তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানালে তারা বাবুল কে একগ্লাস পানি খেতে দেয়। সেখান থেকে ফোর্স নিয়ে যায় টেরিবাজারের ওই বাসায়। স্থানীয় আফিনী গলির পূজার মাঠের পাশে একটি ভবনের ওই বাসা থেকে পাওয়া যায় অঞ্জনের বস্তাবন্দী লাশ।
এই বিষয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, বাবুল ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে বলেছে, ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। ঘটনার সময় তার বোন বাসায় ছিলো না। দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যায়। এই সুযোগে দুলাভাইকে হত্যা করে বাসায় তালা দিয়ে চলে যায়।
তিনি আরো বলেন, বাবুল খুন করার পর তার লাশ বস্তায় ভরে ঘরে তালা দিয়ে চলে যায়। খুনের পর বোনকে ফোনে জানায় সে যেনো বাবার বাসায় চলে যায়। তার স্বামী ব্যবসার কাজে চট্টগ্রামের বাইরে গেছে।
বাড়ীর মালিক জানান, নিহত অঞ্জন একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তার সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে ও তিন বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। বাবুল ধর অঞ্জনের সঙ্গে দোকানে কাজ করতেন। তিনি দুলাভাইয়ের বাসায়ই থাকতেন। ঘটনার সময় অঞ্জনের মা বাড়ীতে গিয়েছিলেন। দুই কক্ষের বাসাটির শোবার ঘরে অঞ্জনকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরে রাখা হয়। লাশ উদ্ধারের পর অঞ্জনের গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। দুই দিন ধরে ওই বাসায় তালা দেখা যায়। তার মানে এর মধ্যেই ঘটেছে ঘটনাটা।
এই বিষয়ে ভবনের মালিক পরিমল দত্ত মানবজমিনকে বলেন, সকালে পুলিশ দেখে বুঝতে পারিনি এই বাড়ীতে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। হাজারি গলির স্বর্ণকার ছিলো অঞ্জন। তিনি দুই বছর আগে তার পাঁচতলা ভবনের উপরের তলার বাসাটি ভাড়া নেন। পূজার সময় অঞ্জনের মা বাড়ি গেছেন। এই সুযোগে ঘটলো ঘটনাটা।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর আহম্মদ বলেন, খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। তারা ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। ওখান থেকে পাওয়া গেছে খুনের কাজে ব্যবহৃত ছুরিটি। পাশাপাশি একটি কেরোসিন ভর্তি কনটেইনার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে থানার আরেকজন এসআই জানান, ঘটনাটি রহস্যজনক। ধারণা করছি ২/৩ দিন আগে খুন করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে। বস্তাটি এখনো খোলা হয়নি। সিআইডির ফরেনসিক টিমের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তারা আসলে বস্তাটি খোলা হবে।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
