বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতার নামে পাকিস্তানকে বিভক্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছন। এই কথা বলে আবার রাজাকারের তালিকায় নাম না উঠে- এ ধরনের মন্তব্যও করেছেন তিনি।

রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জাতীয় সম্পদ, জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়ার ডাক’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন।

আলোচনায় গয়েশ্বর বেশিরভাগ কথাই বলেন শনিবার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে। তার দাবি, এসব চুক্তি আর সমঝোতার সবই হয়েছে ভারতের পক্ষে।

ভারতের সমালোচনা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশটির ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। ভারত সহযোগিতার নামে পাকিস্তানকে বিভক্ত করেছে। এই কথা বলে আজকে আবার রাজাকারের তালিকায় নাম না উঠে।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘এই কথাটি আসত না যদি ভারত বন্ধুত্বের নামে প্রভুত্ব না দেখাত। তারা আমাদের সহযোগী হিসেবে অবশ্যই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা তাদের জন্য থাকবে। কিন্তু চুক্তি করে সেই বন্ধুত্ব নিশ্চিত করতে হবে এটা কেন?’।

ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের সেবা করে তুষ্ট করতে শেখ হাসিনা নিজের জীবন বিপন্ন করার পাশাপাশি দেশ বিক্রি করে দিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় উচ্চতায় রয়েছে। তাহলে বন্ধুত্ব উচ্চতায় থাকলে কেন এত চুক্তি করতে হবে? তিনি বলেন, ‘বিয়ের কাবিন দিয়ে যেমন ভালোবাসা বাড়ে না, তেমনি চুক্তির বেড়াজালে বন্ধুত্ব বাড়বে না বরং ঘৃণা বাড়বে।’

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পাদিত প্রতিরক্ষা সমঝোতার বিষয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘ভারত সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। যারা বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনে। কিন্তু আমরা কেন তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনবো? এবং এই অস্ত্র কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবো।’

পরে গয়েশ্বর স্বীকার করেন নিরাপত্তা চুক্তিতে কী আছে সেটা তারা জানেন না। জঙ্গিবিরোধী সাম্প্রতিক অভিযানকে নাটক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘চুক্তির আগে দেশের মানুষ মনে করেছিলো, আশকোনা থেকে, সিলেট হয়ে মৌলভীবাজার এসে কুমিল্লায় থামলো (জঙ্গিবিরোধী অভিযান)। এটা খুলনা হয়ে রাজশাহী যাওয়ার কথা ছিলো। মানুষ নাটক বুঝে ফেললো, তাই এর আগেই থেমে গেলো। আমার মনে হয় কালকে প্রধানমন্ত্রী আসার পর আর নাটকের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য কিছু নিষ্পাপ শিশুর জীবন দান করতে হয়েছে।’

বড় কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সমস্যা হলে নিজেদের নিরাপদ করতে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে গয়েশ্বের বলেন, ‘তারা (ভারত) বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্য হিসেবে ব্যবহার করবে। এই সমাঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিজেদেরকে ভারত নিরাপদ করলো।’

সীমান্ত চুক্তির পরও বিএসএফ বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে এমন দাবি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিএসএফ মানুষকে হত্যা করলেও বাংলাদেশ তাদের বিরুদ্ধে বন্দুকও ব্যবহার করবে না। তাহলে আমরা কাদের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করবো। আর চীন কি আমাদের আক্রমণ করবে? তাহলে তো তাদের ভারত ডিঙিয়ে আসতে হবে।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘মরতে হলে মরবো। কিন্তু নীরবে মরে যাবো তা হতে পারে না। যদি কেউ আমাদের দাস-দাসীর মতো রাখতে চায় তাহলে আমরা লড়াই করবো। এটা ভারতের বিরুদ্ধে নয়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।’

শেখ হাসিনাকে ভারতে সম্মান জানানোর খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘অনেক করে লেখা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সম্মান কি ব্যক্তিগতভাবে দেয়া হয়েছে না রাষ্ট্রকে দেয়া হয়েছে? প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাখার পরও যদি তিস্তার পানির ন্যায্যতা ভারত নিশ্চিত করতো সেটা দেশের জন্য ভালো হত।’

আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর  রশীদ প্রমুখ্

 

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031