বার কাউন্সিল গেট দিয়ে প্রবেশ পথে এনেক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি স্থাপনের জন্য বেদীও তৈরি করা হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর চাপের মুখে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নিলেও কমপ্লেক্সেই এটি পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে আলোচিত ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়। গত ডিসেম্বরে এটি স্থাপন করা হয় সেখানে। এরপর থেকেই ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো এই ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে তা সরিয়ে নেয়ার দাবি জানাতে থাকে। রমজান মাস শুরুর আগেই এটি অপসারণ না হলে পরিণতি ভাল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

গত ১০ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ভাস্কর্য থাকা উচিত নয়। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

গত ১৫ এপ্রিল বিচারপতিদের বাসভবন উদ্বোধন উপলক্ষে কাকরাইল গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ছিলেন প্রধান বিচারপতিও। সেখানে এই অনুষ্ঠানের পর তার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। আর দেড় মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়। এর নির্মাতা মৃণাল হকও এ সময় সঙ্গে ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্যটি তুলে নিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর রাতেই একেক্স ভবনের সামনে আরেকটি বেদী তৈরি করা হয়। তবে সেটি এখনও ভাস্কর্য প্রতিস্থাপনের মত অবস্থায় যায়নি এখনও।

ওই বেদীটার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত রাতে এটি তৈরি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবেনের সামনে থেকে যারা ভাস্কর্যটি সরিয়েছেন তারাই সেটি তৈরি করেছেন।

ভাস্কর মৃণাল হক  বলেন, ‘গতকাল রাতে কাজটুকু করা হয়েছে। তবে এখনো ভাস্কর্য স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা তাদেরই (সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন) ব্যাপার।’

ভাস্কর্যটি এনেক্স ভবনের সামনেই প্রতিস্থাপন হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, ‘এটি আমি ঠিক জানি না।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানন, বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলেন এবং ভাস্কর্য বিষয়ে মতামত নিয়েছিলেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য মত দিয়েছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা বলেছি, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনসংলগ্ন জাদুঘরের সামনে স্থাপন করা যেতে পারে।’

গত ১৭ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্যটির বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার আলোচনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলতে অথবা জাতীয় ঈদগাহ থেকে যেন দেখা যায় না, এমন ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন তিনি।

এদিকে ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার দাবিতে আন্দোলন করা সংগঠন হেফাজতে ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘মূর্তি’ স্থাপন করে অমার্জনীয় অপরাধ করা হয়েছে। এটা এক জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় প্রতিস্থাপন হলে তারা মানবেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি। নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031