দুই শতাধিক ফিশিং ভ্যাসেলসহ অসংখ্য ট্রলার একটি ফিশিং ভ্যাসেলও সাগরে যেতে পারেনি। সাগরে যেতে পারেনি একটি ট্রলারও। দুই মাসেরও বেশি সময় পর মাছ ধরার জন্য সাগরে যাত্রার উদ্যোগ নিয়েও শেষতক ফিরতে বাধ্য হয়েছে। উত্তাল সাগরে কোনো জাহাজই টিকে থাকতে পারেনি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হওয়ায় ১০/১৫ ফুট উঁচু ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রচন্ড বাতাস। বাতাস এবং ঢেউয়ের তোড়ে সাগরে টিকে থাকা দায় হয়ে উঠেছে।

সূত্র জানিয়েছে, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজনন সময়কালকে নিরাপদ রাখতে সরকার ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে সবধরণের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে। এতে করে গত ২০ মে থেকে সাগরে মাছ শিকার পুরোপুরি বন্ধ ছিল। চোরাগুপ্তা চেষ্টা করে কিছু কিছু জেলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তাদের দন্ডিত করেছে। জাল পুড়িয়েছে। ৬৫ দিনের অপেক্ষার পর গত ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

জাল বুনন, ট্রলার মেরামত, জাহাজ ডকিংসহ সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে দেড় শতাধিক স্টিল বডির ফিশিং ভ্যাসেলসহ দুই শতাধিক ভ্যাসেল এবং শত শত ট্রলার মাছ ধরার জন্য সাগরে যাত্রা করে। কিন্তু কোন কোনটি মোহনা পার হওয়ার পরই ফিরে আসে। কোনটি বহির্নোঙর থেকে। সাগরের ভয়াবহ উত্তালের খবর পেয়ে কোন কোন ফিশিং ভ্যাসেল যাত্রাও করেনি। কয়েকটি ফিশিং ভ্যাসেল ট্রায়াল রান দেয়ার জন্য বহির্নোঙরে গেলেও দ্রুত নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপের কারণে গত কয়েকদিন ধরে সাগর প্রচন্ড উত্তাল রয়েছে। একই সাথে প্রচন্ড বাতাসও। এতে করে সাগরে টিকে থাকা দায় হয়ে উঠে। ইতোমধ্যে উক্ত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ–দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় সাগরে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের তোড়ে একটি একটি ঢেউ জাহাজের উপর আছড়ে পড়ছে। যাতে ফিশিং ভ্যাসেল বা ট্রলারের মতো ছোটখাটো জাহাজগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতিটি মাছ শিকারে যাওয়া ট্রলার ও ফিশিং ভ্যাসেলগুলো মাছ শিকার না করেই নিরাপদে ফিরে আসে।

একাধিক ফিশিং ভ্যাসেলের মালিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গতকাল জানিয়েছেন, আমাদের কোনো জাহাজই সাগরে যেতে পারেনি। সাগর খুবই উত্তাল। অত্যন্ত বাজে অবস্থা বিরাজ করছে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে নিরাপদে মাছ শিকার অসম্ভব হওয়ায় ফিশিং ভ্যাসেলসহ শত শত ট্রলার অলস বসে আছে। যারা সাগরে গিয়েছিল তারাও শূন্য হাতে ফিরে এসেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031