সম্প্রচার কমিশন থাকবে অনলাইন গণমাধ্যম দেখভালের জন্য। এই কমিশনের কাছ থেকেই অনলাইন গণমাধ্যমের অনুমোদন নিতে হবে। এমন বিধান রেখে জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে  এই নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম এ কথা জানান।

সচিব জানান, প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী গঠিত জাতীয় সম্প্রচার কমিশনই অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা করবে। বিধি-বিধান যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে কি না তাও ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এই কমিশন।

সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংবাদ ও প্রকাশিত বা প্রচারিত অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ছয় মাস বা এক বছর পরপর প্রতিবেদন নেবে কমিশন। পরবর্তীতে তা পেশ করা হবে সরকারের কাছে। যেকোনো অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনও করবেন তারা।

জানা গেছে, নীতিমালা পরিপন্থী তথ্য প্রকাশ এবং দেশের বিদ্যমান আইন লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পেলে সংশ্লিষ্ট অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে কমিশন। স্বপ্রণোদিতভাবেও তারা এই কাজ করতে পারবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবে সরকারকে।

এছাড়া কমিশন আইনের বাস্তবায়ন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিধিবিধান প্রণয়নের জন্য অংশীজনদের পরামর্শ নেবে। অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের (সরকার) জন্য একটি অনুসরণীয় নিয়মকানুনও তৈরি করবে কমিশন।

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সংবাদপত্রের জন্য ১৯৭৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট থাকলেও অনলাইন পত্রিকা পরিচালনার জন্য দেশে কোনও আইন, নীতিমালা ও অধ্যাদেশ নেই। সে কারণে নীতিমালা জরুরি। ২০১২ সালে সরকার একটি খসড়া তৈরি করলেও তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

এরপর অনলাইন গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়।

মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধন দিতে ইতোমধ্যেই তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করছে সরকার। তদন্ত শেষ হলে নিবন্ধন দেবে তথ্য মন্ত্রণালয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যম নীতিমালার আলোকেই এটা করা হয়ছে। অনলাইন গণমাধ্যমে কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। তবে পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের জন্য আলাদাভাবে নিবন্ধন করতে হবে না। নিবন্ধন ফি কত হবে তা কমিশন নির্ধারণ করবে।

তিনি বলেন, নতুন করে প্রায় ১৮০০ অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের আবেদন করেছে। তবে ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী যেসব অনলাইনের নিবন্ধন আছে তাদের নতুন করে আর নিবন্ধন নেয়ার প্রয়োজন নেই।

শফিউল আলম আরও বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইন গণমাধ্যমকেও তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারে বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণসহ সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করতে হবে। অশ্লীল, হিংসাত্মক, সন্ত্রাসমূলক এবং দেশীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থি কোনো তথ্য-উপাত্ত বা দৃশ্য প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যাবে না।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন তথ্য ফাঁস করা যাবে না। ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ দিতে পারে এবং আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করে এমন ধরনের তথ্য ও উপাত্ত প্রচার করা যাবে না।

এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা অবমাননা করা যাবে না। অপরাধ নিবারণ ও নির্ণয়ে অথবা অপরাধীদের দণ্ড বিধানে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের হাস্যকর করে এবং তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে এমন তথ্য প্রচার করা যাবে না।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031