ক্ষমতার দম্ভে ছিলেন অন্ধ। সময় যত গড়াচ্ছে ততই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। একদিন যে চোখে দুনিয়া দেখতেন, সে চোখেই এখন সবকিছু ঝাপসা দেখছেন। যা ইচ্ছা তাই করেছেন। কাউকে সম্মান করেননি। এমনকি কাছের  লোকদেরকেও। মিডিয়া ছিল তার শত্রু। সামান্যতম সমালোচনাও পছন্দ করতেন না।

কিন্তু মার্কিন মিডিয়া তার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেনি। ট্রাম্প কারও পরামর্শ শুনতেন না। তার কাছে ‘কূটনীতি’ বলে কিছু ছিল না। মুখে যা আসতো তাই বলে দিতেন। এ কারণে শুরু থেকেই ছিলেন বিতর্কিত। নিজের স্বার্থে কথা বলতেন। পরিবারকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত নিতেও ভুল করতেন না। দেশের জনগণের ওপর তার আস্থা ছিল না। জনরায় মানতে চাইতেন না। অথচ ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েও হিলারি ক্লিনটন পরাজয় মেনে নেন হাসতে হাসতে। এর আগে আল গোরও একই নজির স্থাপন করেন। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প এর ব্যতিক্রম। নির্বাচনের আগেই বলে  দেন- জনরায় মানবেন না। কাল্পনিক  ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আনতে

থাকেন। তাকে থামায় কে! তার কাছে ক্ষমতাই সব। তার দাপটে সহকর্মীরাও ছিলেন অসহায়। ভোটে হেরে গেলেন কিন্তু অযৌক্তিকভাবে বলতে থাকলেন,  ভোট চুরি হয়ে গেছে। কে, কীভাবে চুরি করলো তার কোনো প্রমাণ নেই।  গেলেন আদালতে। কেউ তার কথা আমলে নিলো না। এমনকি তার পছন্দের বিচারকরাও একই রায় দিলেন। তাতেও তিনি দমলেন না। ভেতরে ভেতরে ছক কষতে থাকলেন। ষড়যন্ত্রের জাল বুনলেন ঘরে বসে। কোনো অবস্থাতেই তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। পরিকল্পনা অনুযায়ী সারা দেশ থেকে তার উগ্র সমর্থকদের জড়ো করলেন। এর আগে তিনি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করলেন সমর্থকদের কাছ থেকে। ক্যাপিটল হিলে যখন আইন প্রণেতারা অধিবেশনে বসছেন, ঠিক তখনই  হোয়াইট হাউসের সামনে নিয়ম-বহির্ভূত এক সমাবেশ করলেন। সমর্থকদের বললেন, এই ভোট আমরা মানি না, তাই এটাকে সমর্থন দেয়া যায় না। তোমরা ক্যাপিটল হিলের দিকে যাও। আমিও আসছি। সিনেটররা যখন ভোটের চূড়ান্ত সিলমোহর দেবেন তখনি কমান্ডো ঢুকে পড়লো ক্যাপিটল হিলে। আইন প্রণেতারা তখন ভয়ে কাঁপছেন। এক পর্যায়ে সুড়ঙ্গ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলেন। শতাধিক বন্দুকধারী কমান্ডো হামলায় যখন অংশ নিচ্ছে তখনি হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল হিল ঘেরাও করে রাখলো। দিনটি ছিল বুধবার। মার্কিন ইতিহাসে কালোদিন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। কি ছিল ট্রাম্পের পরিকল্পনা? নানা সূত্রে যেসব খবরাখবর চাউর হয়েছে তাতে জানা যায়, এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা নিয়ে ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন ট্রাম্প। তারই ভাইস প্রেডিডেন্ট মাইক পেন্সকে জিম্মি করে ভোটের ফলাফল অনুমোদন প্রক্রিয়া থামাতে চেয়েছিলেন। এতে সফল হলে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হতো। কিন্তু মাইক  পেন্স তার পরিকল্পনায় সায়  দেননি কখনো। ট্রাম্প টুইট করেও বলেছেন, ওর সাহস নেই। ক্যাপিটল হিল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় হিংসা আর রক্তপাতে শেষ হয় ট্রাম্প অধ্যায়। বেঁচে যায় গণতন্ত্র। মৃত্যু হয় পপুলিজমের। ট্রাম্পের উত্থানে দেশে দেশে পপুলিজমের হাওয়া বইছিল। দুনিয়াব্যাপী এই ধারণাই জন্মেছিল পপুলিজমের পথই বোধকরি জনগণ বেছে নেবে। কিন্তু ক্যাপিটল হিল শেষ  পেরেকটা মেরে দিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা  রোধ করা যায় না। কায়েম করা যায় না পপুলিজম। জনরায়কেও হত্যা করা যায় না।
প্রশ্ন ওঠে, ট্রাম্প কি নিজে নিজে এই ছক তৈরি করেছিলেন? নাকি কেউ এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল। এখন তাকে ২০শে জানুয়ারির আগেই অভিশংসনের দাবি উঠেছে। ডেমোক্রেটরা তাই চাইছেন। রিপাবলিকানরা কি করবেন? তারাও যে বিরক্ত তার ওপর। ট্রাম্প তাদেরকেও যে স্বস্তি দেননি। ট্রাম্প এখন শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছেন। কেউ তাকে বিশ্বাস করে না। এমনকি ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গও ট্রাম্পকে ফেসবুক মঞ্চে নিষিদ্ধ করেছেন। বলেছেন, বুধবার যা ঘটেছে এটা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা তুলে দেয়ার কোনো বার্তা দেয় না। বরং সমর্থকদের সমালোচনা না করে সাহসের প্রশংসা করেছেন। জাকারবার্গ বলেন, নিয়ম মেনেই মার্কিন  প্রেসিডেন্টকে এই মঞ্চ ব্যবহার করতে  দেয়া হয়েছে। যদিও বেশ কয়েকবার তার দেয়া পোস্ট সরানো হয়েছে। কখনো পোস্টের নিচে লেখা হয়েছে, এতে নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। জাকারবার্গ বলেন, তখন আমরা মনে করতাম, প্রত্যেক ব্যক্তিরই কথা বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বুধবার যা ঘটে গেল তাতে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ডে আমাদের স্বাধীন মঞ্চকে ব্যবহার করতে দিতে পারি না। ক্ষমতা ছাড়ার ১২দিন আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। ক্ষমতা ছেড়ে যাবেন কোথায়? ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন স্কটল্যান্ড যাবেন। সেখানে তার বাড়ি রয়েছে। কিন্তু স্কটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছেন, সেখানে তাকে স্বাগত জানানো হবে না। নিউ ইয়র্কেও যাবেন না। বাকি থাকলো ফ্লোরিডা। সেখানেই হয়তো তার ঠাঁই হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031