বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার হৃৎপিণ্ডের ব্লক অপসারণ করে সফলভাবে একটি ‘স্টেন্ট’ বা ‘রিং’ বসানো হয়েছে বলে  । হৃদযন্ত্রে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর এনজিওগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে শনিবার বিকালে তার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার রাতে তাকে ঢাকার বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়লে এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত হয়। খবর বিডিনিউজের।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, তার মেইন আর্টারিটায় ৯৯ পার্সেন্ট ব্লক এবং সেটা চিকিৎসকরা সফলভাবে স্টেন্ট করেছেন, বেলুনিং করে ব্লক দূর করে সেখানে তারা স্টেন্ট (রিং) বসিয়েছেন। ডাক্তাররা অত্যন্ত আশাবাদী যে, তার এই টিট্রমেন্টের ফলে তিনি আপাতত হার্টের যে সমস্যা সেটা থেকে সাময়িকভাবে রিলিভড হবেন। এ সময় আবারও খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বহুবার দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলেছি। দলের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বাইরে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, তার পরিবারের সদস্যরা একসময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখাও করেছেন।

আজকে তার এই অসুস্থতা প্রমাণিত হল বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে এবং পড়েছে বার বার।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড বলেছে যে, ম্যাডামের একটা মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তারপরে ওনার হাসপাতালে থাকতে থাকতে আরেকটা উপসর্গ এসে যায়। সেটা হচ্ছে– সাফোকেশন শুরু, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন অতিদ্রুত এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোমিন–উজ জামান ও অধ্যাপক সামস মনোয়ার রয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে সেই মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সর্বশেষ অবস্থা এবং তার হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন চিকিৎসকরা। এরপর দুপুর ১টায় খালেদা জিয়াকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। দেড় ঘণ্টা পর তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট– সিসিইউ’র কেবিনে নেওয়া হয়।

বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডামের হার্টের অসুখ। এটা লাইফ থ্রেটেনিং। এটা আজকে সাময়িকভাবে চিকিৎসকরা সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তার যেসব অন্যান্য রোগ রয়েছে, সেটার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সেটা দেশের বাইরে উন্নত কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দরকার।

ডাক্তাররা আগেও বলেছেন, আজকেও যে মেডিকেল বোর্ড বসেছে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ম্যাডামকে বিদেশে উন্নত টিট্রমেন্টের জন্য পাঠানোর সাজেস্ট করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন সরকারের কাছে আপনাদের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছি। দল থেকে সিদ্ধান্ত এখনও নেইনি। অবশ্যই আমরা নেব। তবে এটা জনগণের দাবি, গোটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার জীবন রক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক এবং মুক্তি দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক।

২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ নিয়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ দফায় ঢাকার বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হল।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। ২০২১ সালে একবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান চিকিৎসকরা। বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই দাবি করে তাকে বিদেশে পাঠাতে কয়েক দফা আবেদন করেছিলেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার। কিন্তু সাময়িক মুক্তির শর্তের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবারই তা নাকচ করেছে সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031