পঁচাত্তরের কাছাকাছি বয়সী এক বৃদ্ধা দিনাজপুরের হিলিতে গত কয়েকদিন ধরে ভবঘুরের মতো ঘুরছিলেন । মানুষের বারান্দায়, ফুটপাতে কাটছিল তার দিন–রাত। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, সন্তানদের খুঁজছেন তিনি। সন্তানরা কোথায় আর কোথা থেকে কীভাবে হিলিতে এসেছেন জিজ্ঞেস করলে ওই বৃদ্ধা জানান, ঢাকা থেকে একটি বাসে তুলে ছেলে জামিল হোসেন তাকে বলেন, তুমি আর কখনো বাড়িতে আসার চেষ্টা করবে না, যেখানে ইচ্ছা চলে যাও। আর এসো না। বৃদ্ধ বয়সে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া ওই বৃদ্ধা নিজের নাম বলছেন শাকিলা বেগম। খবর বাংলানিউজের।

বৃদ্ধার কথায় বোঝা গেছে, তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তারই ছেলে জামিল। তুলে দিয়েছেন দিনাজপুরের দূরপাল্লার কোনো এক বাসে। এভাবে বের করে দেওয়ার পরও ছেলের কাছেই ফিরতে চান এই মা। তিনি জানালেন, ছেলের বাসা ঢাকায়। ছেলের মোবাইল নাম্বার নেই তার কাছে। তিনি নাকি চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে নাম্বার দেয়নি ছেলে। চোখের পানি মুছতে মুছতে বৃদ্ধা বলছিলেন, বাসে তুলে দেওয়ার পর আমি ও বাসের হেল্পার ছেলের কাছে মোবাইল নম্বর চাইছিলাম। সে তার নম্বর দেয়নি। বৃদ্ধা অবশ্য বুঝতেই পারছিলেন না, ঢাকা ছেড়ে অনেকদূরে চলে এসেছেন তিনি। ঘুরে বেরিয়ে সন্তানদের খোঁজার চেষ্টা করেছেন হিলির বিভিন্ন স্থানে।

অবশেষে সেই বৃদ্ধার ঠাঁই হয় হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে। সেখানে অবহেলায় খেয়ে না খেয়ে এতোদিন কাটানো বৃদ্ধার চিকিৎসা চলে। গত শনিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তায় শাকিলা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন রোববার (গতকাল) বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায়। তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পেরে বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি তার নাম আর ছেলের নামটাই বলতে পারেন। এছাড়া ঢাকায় কোথায় থাকতেন, ছেলে কী করে এধরনের কোনো ডকুমেন্ট দিতে পারছেন না। ছেলের মোবাইল নাম্বারও জানা নেই তার। আমরা সবদিক থেকেই তার ঠিকানা শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি।

একইরকম তথ্য দিয়ে হাকিমপুর থানার ওসি আবু সায়েম মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, শাকিলা বেগম নামের ওই বৃদ্ধার পরিবারের ঠিকানা জানার চেষ্টা চলছে। পরিবারকে খুঁজে পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাকিমপুর সমাজসেবা অফিস থেকে গতকাল বিকেলে জানানো হয়েছে, তাদের তত্ত্বাবধানে বৃদ্ধা শাকিলা বেগমকে রংপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়েছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031