নেপালে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন পণ্যসামগ্রির বিশাল একটি চালান পাঠিয়েছে। এ চালানের মূল্যমান ২৮ লাখ ডলার। চালানটি এরই মধ্যে চীন সীমান্ত পেরিয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাত্রা করেছে। এ ঘটনা ভারতের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, নেপালে কয়েক দশক ধরে একচ্ছত্র বাণিজ্য করে আসছে ভারত। সেক্ষেত্রে চীন তার বাজার দখল করার উদ্যোগ নিয়েছে। চীনা পণ্য নেপালে প্রবেশ করলে পরিবহন খরচ হিসাবে নিয়ে পণ্যমূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হবে। কিন্তু ভারতের পণ্যের সঙ্গে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার জন্য চীনের বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি এক্ষেত্রে ভর্তুকি দিচ্ছে। ফলে নেপালে ভারতীয় পণ্য মার খেতে পারে। ২০০৫ সালের পর এটাই নেপাল ও চীনের মধ্যে সবচেয়ে বড় পণ্যসামগ্রির চালান। পাহাড়ি দুর্গম পথের ভেতর দিয়ে দুটি দেশের বিভিন্ন শহরকে যুক্ত করার জন্য ২০০৫ সালে চীন তৈরি করে ‘ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে’। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। ওই চালানে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ইলেক্ট্রনিক বিভিন্ন পণ্য। পর্যবেক্ষকরা বলছে, এর ফলে নেপালে ভারতের বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নেপাল হলো ভারতের অবাধ বাণিজ্যিক বাজার। সেই বাজারে চীনের এমন প্রবেশাধিকারে শঙ্কিত অনেকেই। তিব্বতের সীমান্ত বন্দর গাইরং থেকে কাঠমান্ডুর দূরত্ব ৮৬০ কিলোমিটার। চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, কয়েক ডজন ট্রাকভর্তি চীনের পণ্য নিয়ে সেই গাইরং সীমান্ত বন্দর ছেড়ে যাত্রা করেছে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে। উল্লেখ্য, এ বছরের শুরুর দিক থেকে নেপালের সঙ্গে চীন সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। নেপাল যাতে ভারতীয় পণ্যের (নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক পণ্য) ওপর থেকে নির্ভরতা কমায় সেজন্য কাঠমান্ডুকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করতে কাজ করতে থাকে চীন। এক সপ্তাহ আগে কন্টেইনার চলাচল ও বিনিময় বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে নেপাল ও চীন। গত মাসে চীনের টেলিযোগাযোগ বিষয়ক পণ্য ও সুবিধা ব্যবহার বিষয়ক একটি চুক্তি করে নেপালি টেলিকম। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীন থেকে যেভাবে নেপালে পণ্য আসছে তাতে নেপাল খুব বেশি উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়বে এবং এতে তারা চীনের রেল কানেক্টিভিটি বা রেল সংযোযেগের প্রস্তাব মেনেও নিতে পারে। ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো প্রমোদ যশোয়াল বলেছেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচ- এই পণ্য সরবরাহকে উৎসাহিত করছেন। এর কারণ হলো তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংকে নেপাল সফরে রাজি করাতে চান। যদি তিনি সি জিনপিংকে রাজি করাতে পারেন তাহলে তাতে প্রধানমন্ত্রী প্রচ-ের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রচ- নেপালের ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় থাকুন এমনটা চায় চীন। প্রধানমন্ত্রী প্রচ-ের প্রতিদ্বন্দ্বী শের বাহাদুর দেউবা সম্প্রতি একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাসিত তিব্বত সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়টি মোটেও ভালভাবে নেয় নি চীন।
সিনহুয়া বলেছে, চীন থেকে নেপালের উদ্দেশ্যে যে চালানটি আসছে তার মধ্যে রয়েছে জুতা, কাপড়চোপড়, হ্যাটস, ফার্নিচার, রান্নাঘরে ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিসপত্র, নির্মাণ সামগ্রি। এগুলো নিয়ে দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশ থেকে রেলপথে তিব্বতের সিগেজেতে পৌঁছে। সেখান থেকে পণ্য খালাস করে তোলা হয় ট্রাকে। কিন্তু গুয়াংডং থেকে কাঠমান্ডুর দূরত্ব প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার। এত পথ পাড়ি দিয়ে পণ্য কাঠমান্ডুতে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে এর দাম বেশি পড়বে। এক্ষেত্রে চীন সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি ভর্তুকি দিচ্ছে, যাতে তাদের পণ্য নেপালে এসে ভারতের পণ্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পারে। উল্লেখ্য, গত মার্চে বেইজিং সফরে যান নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। ওই সফরের সময় তিনি দু’দেশের মধ্যে রেলসয়যোগ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কিন্তু সেই কর্মপরিকল্পনা থমকে দাঁড়ায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদে পরিবর্তন ও নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। তিব্বত তিয়ানজি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি লিঃ-এর জেনারেল ম্যানেজার ইয়াও ইয়ানফেং বলেছেন, গুয়াংঝাও থেকে গাইরং পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ দিন। সমুদ্রপথে তা পাঠাতে লাগে ২০ দিন। এক্ষেত্রে সড়ক পথে অনেক কম সময় লাগবে পণ্য পৌঁছাতে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই সময় ৩.৭ দিনে নামিয়ে আনা যাবে।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
