আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হচ্ছে মাদকের গডফাদারদের মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে করা আইনের খসড়া। এছাড়া মাদক নির্মূলে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হবে অচিরেই। ইতোমধ্যে বন্দুকযুদ্ধে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নিহত হয়েছে অনেক মাদক ব্যবসায়ী। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর খুলশী থানা এলাকায় তিন মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। এর আগেও বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের কয়েকজন। কিন্তু মাদকের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না কিছুতেই। বরং বন্দুকযুদ্ধে এক গ্রুপের শীর্ষ অধিপতি মারা গেলে সেই ফাঁকা মাঠ দখল করছে অন্য গ্রুপ। গত ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় মাদক বিরোধী এ সাঁড়াশী অভিযানের কথা জানান।

মূল কারণ কী : মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো–উপ অঞ্চলের উপ–পরিচালক শামীম আহমেদ  বলেন, অভিযান চলাকালেও মাদক ব্যবসা চলছে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এর নানা কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, ইয়াবা তথা মাদক ব্যবসাটা প্রফিটেবল ব্যবসা। টাকার প্রতি লোভ সবারই আছে। অভিযানে মাদকের যোগান কমছে ঠিকই, কিন্তু ডিমান্ডতো কমেনি। অভিযানের কারণে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বড় চালান সেভাবে আসতে পারছে না। তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সামাজিক প্রতিরোধ জোরদার করতে হবে।

সিএমপি নগর গোয়েন্দা শাখার (বন্দর) উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, অভিযানে মাদকের বড়ো চালান আসার সুযোগ পাচ্ছে না। গত দুই মাসে ডিবির অভিযানে অন্ত:ত বড় কোন চালান ধরা পড়েনি। মাদক ব্যবসায়িদের গ্রেফতারে আমরা যেমন কৌশল পাল্টাচ্ছি, তারাও তা–ই করছে। চাহিদা বন্ধ না হলে মাদকের ব্যবসা বন্ধ করা কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২৫৮ স্পট, ২৮৪ ব্যবসায়ি : মহানগরীর ২৫৮টি স্পটে ২৮৪ ব্যক্তি চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৬ থানার তৈরিকৃত মাদক ব্যবসায়িদের মধ্যে ৬০ জনই নারী। এসব স্পটে দৈনিক ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। নগরীর সবচেয়ে বড় তিনটি স্পটই রেলস্টেশন কেন্দ্রিক। তাদের ব্যবসা চলতেই থাকে। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ হরেক রকম মাদক।

মাদক ব্যবসায়িদের তালিকা আপডেট নয়: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৬ থানা এলাকায় মাদক ব্যবসায়িদের একটি তালিকা তৈরি করেছে কিছুদিন আগে। তাদের মধ্যে ১৬ থানায় ২৫৮টি স্পটে মাদক বিক্রি করছে ২৮৪ ব্যক্তি। এর মধ্যে কোতোয়ালিতে ৫৪ স্পটে ৯৬ জন, সদরঘাটে ৪ স্পটে ৪ জন, চকবাজারে ৩ স্পটে ৩ জন, বাকলিয়ায় ২৪ স্পটে ২৪ জন, খুলশীতে ২৬ স্পটে ২৬ জন, পাঁচলাইশে ২২ স্পটে ৫ জন, চান্দগাঁওতে ১২ স্পটে ১৬ জন, বায়েজিদ বোস্তামীতে ১৩ স্পটে ১৩ জন, পাহাড়তলীতে ২৪ স্পটে ২০ জন, আকবরশাহে ১৯ স্পটে ১৯ জন, হালিশহরে ১৪ স্পটে ৪ জন, ডবলমুরিংয়ে ২০ স্পটে ২০ জন, বন্দরে ৬ স্পটে ৪ জন, ইপিজেডে ৪ স্পটে ১৫ জন, পতেঙ্গায় ৩ স্পটে ৫ জন এবং কর্ণফুলীতে ১০ স্পটে ১০ জন। তবে ডিসি শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে এ তালিকা হালনাগাদ করা হবে।

ব্যবসায় এমএলএম পদ্ধতি : পণ্য বিপণনের মতো এমএলএম পদ্ধতির মাধ্যমে ইয়াবাসেবী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী বেড়ে চলেছে। কৌশলে সেবনের আগ্রহ তৈরি করে প্রথমে কাঙ্‌ক্িষত ব্যক্তিকে বিনামূল্যে ইয়াবা সেবন করায় কারবারীরা। এরপর তাকে নিজের প্রয়োজনে ইয়াবা কিনতে বাধ্য হয়। এর পেছনে জড়িত আছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

মাদকের রুট : চট্টগ্রামের আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকে। সড়কপথের চেয়ে বেশি আসছে জলপথে। ফেন্সিডিল ও গাঁজা আসছে ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে। আর বিদেশি মদ ও বিয়ার আসছে বন্দরে পণ্য আনা সামুদ্রিক জাহাজে। দেশীয় মদ আসছে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে।

বরিশাল কলোনি নেই, ব্যবসা আছে : নগরীর সবচেয়ে বড়ো মাদকের স্পট বরিশাল কলোনি। মাদকের হিংস্র থাবা মুক্ত করতে বরিশাল কলোনি ভেঙে দেয়া হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু তাতেও বন্ধ হয়নি বরিশাল কলোনির মাদক ব্যবসা। সদরঘাট থানার ওসি নেজামউদ্দিন মানতে নারাজ যে বরিশাল কলোনিতে পুনরায় মাদক ব্যবসা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ওসি থাকাবস্থায় বরিশাল কলোনিতে আর ব্যবসা চলবে না। তবে একটি সিন্ডিকেট যে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছে সেই বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031