স্ট্রাইক ফোর্স একটি বড় অংশের মর্টগেজ কেলেঙ্কারি বিষয়ে তদন্ত এবং বিচার কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে মর্টগেজ ফ্রড স্ট্রাইক ফোর্সকে কঠিন অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। একটি বড় কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হোতাকে ২৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিতও করা হয়। এর কারণ ছিল সত্যিকার অর্থেই একটি ব্যতিক্রমী টিম হিসেবে মর্টগেজ সিকিউরিটি খাতে বিনিয়োগে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য জেপি মর্গানের কাছ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থ আদায় নিশ্চিত করতে পেরেছি আমরা। এছাড়াও আমরা সান ট্রাস্ট মর্টগেজের কাছ থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার, দু’শ’ মিলিয়ন ডলার সিটিগ্রুপের কাছ থেকে এবং ব্যাংক অব আমেরিকার কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার নিশ্চিত করতে পেরেছিলাম। আর এরা সবাই ছিল মর্টগেজ সংকটের সঙ্গে যুক্ত। নিশ্চিত করেই বলা যায় এটা ছিল বড় রকমের জয়। কিন্তু এটা বিজয় উদ্‌যাপনের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

কারণ, এ কাজগুলো সব মানুষেরই সাহায্যে আসছিল। তখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ছিল এ সংকটে। যদিও কয়েক বিলিয়ন ডলারের ওপর আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি তবুও অসংখ্য মানুষ তাদের বাড়ি হারিয়েছে। অর্থনীতির কাঠামোগত অনেক ক্ষতি হলেও এবং বেশকিছু জায়গায় সমাধান মিললেও অনেক মানুষ তাদের মর্টগেজের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি এবং তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না। সেখানে চাকরিও ছিল না এবং মজুরিও ছিল না।

অগুনিত মার্কিনি দেখতে পাচ্ছিল তাদের জমানো অর্থ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সন্তানদের শিক্ষার জন্য পিতামাতার আর্থিক খরচের যে স্বপ্ন তা কুয়াশা আর বাষ্পের মতো মিলিয়ে যাচ্ছিল। পরিবারগুলো একের পর এক বহুবিধ হতাশার মুখোমুখি হয়েছিল। আকস্মিকভাবে চাকরিচ্যুত এবং গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জেলার স্কুলগুলো ছাড়তে শুরু করেছিল অনেকেই।

দ্য লানচেট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল যে, অর্থনৈতিক মন্দার সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পেয়েছিল তিন দশমিক আট শতাংশ। এই আত্মহত্যার সংখ্যা প্রায় ১,৩৩০।

অনেক দিক থেকে এই যে অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ এটা আমাদের ওপর অব্যাহত ছিল ২০১৮ সালেও। ফ্রেসনো এলাকায় বেশির ভাগ বাড়ির দাম অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থার আগে যা ছিল তার থেকেও অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্পদ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং এই অর্থ আর কখনও তারা অর্জন করতে পারেনি।

গবেষণা এটাই বলে যে, কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোর ওপর এই আঘাত এসেছিল বৈষম্যমূলকভাবে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্স কাউন্সিলের নিরপেক্ষ এক রিপোর্টে দেখা যায় যে, ২০০৭-২০০৯ সালের চলা সংকটে একইরকমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলো। ২০১১ সালের মধ্যে দেখা যায় শ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলোর সম্পদ হারানোর পরিমাণ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে এসেছে কিন্তু একইসময় কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলো তাদের সম্পদের আরও অতিরিক্ত ১৩ শতাংশ হারিয়েছে। এর পরিণতিতে, যদি কোনো মহামন্দা না ঘটতো তাহলে কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলো যে পরিমাণ সম্পদের মালিক হতো ২০৩১ সালে এসে তাদের সেই সম্পদ থাকবে আগের অবস্থা থেকে ৯৮ হাজার ডলার কম। অন্যভাবে বলা যায়, পরবর্তী প্রজন্ম লোভ এবং বোকামির কারণে এর ফল ভোগ করবে। যা হয়েছে আমরা তা পরিবর্তন করতে পারবো না কিন্তু এটি যেন আর না হয় তা নিশ্চিত করতে পারি আমরা।

ওয়ালস্ট্রিটের সংস্কৃতি পাল্টে যায়নি। শুধুমাত্র কিছু আইনের বদল ঘটেছে। ব্যাংকগুলো সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে ওয়ালস্ট্রিট বিষয়ে যে সকল সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল তার পুরোটাই বাতিল করে দিয়েছিল। এর ফলে তারা থিতু হতে পেরেছিল। কিন্তু যেক্ষেত্রে তারা বাতিল করতে ব্যর্থ হয়েছে সেক্ষেত্রে তারা সবরকম পদক্ষেপের চর্চা করেছে। দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাংক ৩৪৫ বিলিয়ন ডলার সাবপ্রাইম লোনস বিনিয়োগ করে নন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের দায়-দেনা পরিশোধে। সেসব ব্যাংককে বলা হয়ে থাকে ছায়া ব্যাংকিং।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে আরও বলা হয়, যেসব ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধে অনীহা আছে এবং যে কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্সশিটে গরমিল আছে তাদেরকে ঋণ দেয়ার চেয়ে ব্যাংকের বাইরে যারা ঋণ নিতে চান তাদেরকে ঋণ দেয়া নিরাপদ বলে মনে করলো ব্যাংকগুলো। এই সম্পর্কের অর্থ হলো ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলো গভীরভাবে নিজেদের ভেতরেই আন্দোলিত হতে থাকবে।

যদিও ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট কনজ্যুমার ফাইন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরোতে এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন যিনি এই ব্যুারোকে একটি কৌতুক হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি ভেতর থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সক্রিয়ভাবে ধ্বংস করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ২০১৮ সালে ওয়ালস্ট্রিটের নিয়মকানুন কঠোর করা সত্ত্বেও কংগ্রেস অত্যাবশ্যকীয় সুরক্ষার দিকে অগ্রসর হয়। এর অর্থ হলো- মাঝারি আকারের ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রকদের নজরে থাকবে। অগ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়েও এটি অনেক বেশি ছিল। এটি ছিল আপত্তিকর।

এখনও অনেক কিছু করার আছে। আমরা যদি রাজি হই যে, ব্যাংকগুলোর এমন বেপরোয়া আচরণের কারণে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, যদি আমরা সম্মত হই যে, ব্যাংকগুলো আমাদেরকে আরেক দফা মন্দার দিকে নিয়ে যাবে না, যদি আমরা একমত হই যে, বাড়ির মালিকরা মর্যাদা এবং সম্মান দাবি করেন তখন আমাদের সামনে পরিবর্তন অর্জনের জন্য একটিই পথ খোলা থাকে সেটি হলো আমাদের কণ্ঠস্বর এবং আমাদের ভোট।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031