ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হলে মামলার হুমকি দিয়েছে। জোট নেতারা বলছেন, দেশে ইভিএমের ব্যবহার সংবিধান পরিপন্থি। কারণ সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। আর ইভিএম দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোট হয় না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এক সেমিনারে অংশ তারা এসব কথা বলেন। তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা খাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ‘ইভিএমকে না বলুন, আপনার ভোট সুরক্ষিত করুন’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে ইভিএম প্রকৌশলীরা যন্ত্রটি দিয়ে কীভাবে ভোট কারচুপি করা যায় এর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন। তাদের যুক্তি, যেকোনো ডিভাইসের মাধ্যমে দূর থেকে ভোট কারচুপির সুযোগ আছে ইভিএমে। এই মেশিনের মাধ্যমে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে। ইভিএমের মাধ্যমে প্রিসাইডিং অফিসার নিজেই কারো সহযোগিতা ছাড়া প্রতি ঘণ্টায় ১০০ ভোট দিতে পারবেন বলে দাবি করেন প্রকৌশলীরা।

সেমিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ, এ কারণে জনগণের কথা তাদের কানে যায় না। আর এ জন্য সরকার ধিকৃত। তারা রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে পড়েছে, আবার ক্ষমতায় আসার জন্য অপকৌশল নিয়েছে। তাদের জনগণের প্রতি কোনো আস্থা না থাকায় এ রকম করে। জনগণ ভোট কারচুপি প্রতিহত করবে। ’

ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ইভিএম ব্যবহার সংবিধানবিরোধী দাবি করে বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার করা হলে¡ সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। সেনাবাহিনীকে দিয়ে এই সংবিধানবিরোধী কাজ করিয়ে তাদের বিতর্কিত করবেন না৷ ইভিএম কারা তৈরি করেছে, এই মেশিন কোথা থেকে অপারেট করা হবে জনগণ জানে না৷এটা ব্যবহার করা যাবে না। করলে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করা হবে।’

রব বলেন, ‘সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ এর ২/এ তে আছে, বাংলাদেশের সংসদ গঠিত হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে, ইভিএম মেশিনে প্রত্যক্ষ ভোট হবে না। তাই সংবিধান সংশোধন করা ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যক্ষ ভোটের শর্ত হলো ভোট গণনা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ থাকবে। বাংলাদেশে এই ইভিএম ব্যবহার করা গণতন্ত্রবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী।’

কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা ইভিএম চাই না। কারণ ইভিএম যারা এনেছেন তারাও ব্যবহার করতে জানেন না। আর যারা ভোট দেবেন তারা এখনো তা দেখেননি। যারা ইভিএম দেখেননি, তারা ভোট দিলে তাদের ভোট যে প্রয়োগ হবে তার নিশ্চয়তা নেই।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা প্রধানত নির্বাচনে যেতে চাই। এটিকে আমরা লড়াই হিসেবে নিচ্ছি। আমাদের এই নির্বাচনে জিততেই হবে। আর ইভিএমের বিরোধিতা করছি একারণে যে, তারা (সরকার) ভোট চোর। এই সুযোগ তারা নেবে। কারণ আগে তাদের ভোট চুরির উদাহরণ আছে। ইভিএম হলো একটি ফালতু জিনিস। আমরা একটি বস্তুনিষ্ঠ নির্বাচন চাই। তার জন্য ইভিএম চাইনা। সরকার নির্বাচন কারচুপি করার চেষ্টা করলে জনগণের অভ্যুত্থান হবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা গণস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে তো এখনো খোদাভক্ত মনে হচ্ছে। আশা করি তাদের বিবেক জাগ্রত হবে। বেশি চালাকি করবেন না। উল্টাপাল্টা কিছু করলে পরে বাড়িতে নিজের মুখটি লুকিয়ে রাখতে হবে।’

সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. আব্দুল মঈন খান, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীসহ ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031