খুবই সামান্য এবং মামুলি ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে  প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড.  তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম। তিনি বলেছেন, এই বৃদ্ধির কারণে জনজীবনে কোনো প্রভাব পড়বে না। গতকাল বিদ্যুৎ ভবনে সেক্টর লিডারদের দুইদিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা একথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নিজস্ব বিবেচনায় এই দাম বাড়িয়েছে, এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। একই অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দাম খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের এখন থেকে মাসে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ টাকা বিল দিতে হবে।

 গ্রাহকপর্যায়ে যে প্রভাব পড়বে তা সহনীয় বলেই মনে করি। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দাম বৃদ্ধির কাজটি বিইআরসি নিজস্ব বিবেচনা থেকে বাড়িয়েছে, এক্ষেত্রে আমাদের কোনো প্রভাব নেই। এদিকে দাম বাড়ানোর পরও সরকারকে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে বলে জানান তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নিশ্চয় সবদিক বিবেচনা করেই এই দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও সরকারকে চার হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি দেয়া লাগবে। সরকার এটাকে ভর্তুকি বলে না, এটাকে বলা হয় মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে একটা বিনিয়োগ। গ্রামে-গঞ্জে লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিল বাড়েনি। নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের বিল সামান্য বেড়েছে। মিনিমাম চার্জ একটা নেয়া হতো, সেটাকে রহিত করা হয়েছে। সামঞ্জস্যকরণ করা হয়েছে। মামুলি একটু বৃদ্ধি করা হয়েছে। দাম বাড়ানো নিয়ে কেউ কোনো রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক খেলায় মেতে না উঠলে সব ঠিক থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন জ্বালানি উপদেষ্টা। বিইআরসির কাছে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এখন বিদ্যুতের যে দাম বৃদ্ধি হয়েছে তা গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হবে না। তাহলে এটি খুব বেশি কিছু নয়। তবুও হয়ত কিছুটা অ্যাফেক্ট পড়বে গ্রাহক পর্যায়ে। আমি মনে করি এটি সহনীয়। নতুন হারে আবাসিকে মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ১৫ টাকা, ১৫০ ইউনিটে ৪৮ টাকা, ২৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৯০ টাকা, ৪৫০ ইউনিট পর্যন্ত ১৯৬ টাকা এবং ১০০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ৬০৪ টাকা। তবে ন্যূনতম বিল তুলে দেয়ায় কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ কমবে। ১৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাঁচবে ১৭ থেকে ২২ টাকা। দাম বাড়ানো হয়েছে কেবল খুচরা পর্যায়ে; পাইকারিতে বিতরণ কেন্দ্রগুলোর জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দাম বৃদ্ধিতে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ টাকা গুনতে হবে। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের এডজাস্টমেন্টেই কিছুটা প্রভাব থাকে। কিন্তু সেটা সহনীয় কিনা সেটা হলো প্রশ্ন। বার্ক (বিইআরসি) সব যুক্তি তর্ক শুনে মনে করছে যে এটা এফর্ডেবল। এখানে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি মনে করি এডজাস্টমেন্টটা আমাদের দরকার ছিল। তারা যেটা করেছে, আমার মনে হয় এটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। প্রসঙ্গত, বিইআরসি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়, যা আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে এবার নিয়ে খুচরা পর্যায়ে আট দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব উল আলম প্রমুখ।
Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031