বাংলাদেশ মিয়ানমারকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দফায় দফায় তালিকা দিচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জোর প্রচেষ্টায় । সর্বশেষ অতিসম্প্রতি ২ লাখ ৩০ হাজার বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকের তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। আগে ৫ দফায় ৬ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হয়েছিল। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, দু’বছরে ছয় দফায় মোট ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের তরফে তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে কাঙ্ক্ষিত সাড়া নেই। দীর্ঘ সময় অপচয় করে তারা তাদের বাস্তুচ্যুত ২৮ হাজার অধিবাসীকে গ্রহণে সম্মতির কথা জানিয়েছে। দু’বছরে ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে জানিয়ে মিয়ানমার দাবি করেছে ওই তালিকায় তারা নাকি সন্ত্রাস বা উগ্রপন্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে অভিযুক্ত ৩শ’ ৫০ রোহিঙ্গাকে খুঁজে পেয়েছে। প্রত্যাবাসনের অবশ্য পালনীয় শর্ত হচ্ছে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্যাম্পে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা হস্তান্তর করবে আর মিয়ানমার যত দ্রুত সম্ভব তালিকা যাচাই-বাছাই করে তাদের নাগরিকদের গ্রহণে অনাপত্তি জ্ঞাপনপূর্বক তালিকা ফেরত পাঠাবে। হস্তান্তর আর ফিরতি তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় ঢাকার কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশের অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের আদি নিবাস রাখাইনে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্নে অং সান সুচি সরকার বরাবরই উদাসীন।

তারা একেক সময় একেক অজুহাত দেখিয়ে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রক্রিয়া বিলম্ব করছে। তালিকা যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও মিয়ানমার সরকারের গতি অত্যন্ত ধীর। তাছাড়া যে ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই করেছে তার মধ্যে ১৪ হাজার রোহিঙ্গার নাম নাকি তাদের ডাটাবেজের সঙ্গে মিলেনি- এমন দাবি করে তাদের গ্রহণের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে তালিকা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ। তার আগের বছর নভেম্বরে প্রত্যাবাসনে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অ্যারেঞ্জমেন্ট এবং মাঠ পর্যায়ে প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়। ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্মী সেনা এবং তাদের দোসরদের গণহত্যা, গণধর্ষণসহ বর্বর আক্রমণের মুখে জীবন বাঁচাতে দলে দলে নারী, শিশু, বৃদ্ধাসহ লাখো মানুষ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশ্রয় প্রার্থনা করে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত ওই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সীমান্ত থেকে রাখাইনের মৃত্যুকূপে ফিরিয়ে না দিয়ে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেন। বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়ে রয়েছেন।
Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031