হেফাজতে ইসলামও মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও বর্বরোচিত নির্যাতনের প্রতিবাদে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলোচিত এই সংগঠনটি ঢাকার গুলশানে মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও করবে। এছাড়া আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও গণমিছিল এবং ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ ও ওআইসি মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি দেবে সংগঠনটি।

এছাড়া মসজিদ-মাদ্রাসায় কুনুতে নাজেলার (ফজরের নামাজে বিশেষ দোয়া) আমল এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য ত্রাণ তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজত।

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মলেনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

প্রসঙ্গত, এর আগে একই ইস্যুতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গণজাগরণ মঞ্চ ১১ সেপ্টেম্বর এবং ইসলামী আন্দোলন ১৩ সেপ্টেম্বর এই কর্মসূচি পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাবুনগরী বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোথাও নয়; আমাদেরই সীমান্তবর্তী, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকানে ঘটছে সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ গণহত্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমরা অপরিসীম মর্মবেদনা ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রত্যক্ষ করছি, আমাদের ঘরের পাশে আরাকান রাজ্যের নিরীহ, নিরস্ত্র ও বেসামরিক মানুষকে প্রতিদিন পশুর মতো জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর মিয়ানমার সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সন্ত্রাসী বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত ফ্যাসিবাদী জুলুম ও রাষ্ট্রীয় গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। নিরীহ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি আরাকানের হিন্দুদের ওপরও সম্প্রতি হামলা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের নৃশংসভাবে হত্যা করে শরীর টুকরো টুকরো করে নাফ নদীসহ খাল, বিল, জলাশয়ে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। অসংখ্য মুসলিম মা বোনেরা ধর্ষণ, গুম ও নির্মম হত্যার শিকার। নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আক্ষরিকভাবেই সেখানে রক্তের নদী বইছে।’

হেফাজত মহাসচিব বলেন, ‘রক্তাক্ত আরাকান, রক্তাক্ত মুসলমান কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের কর্তব্য পালন করছে না। চীন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুনি মিয়ানমার সরকারকে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়েছেন। ইহুদিবাদী ইসরাইল অস্ত্র ও সমর প্রশিক্ষক সরবরাহ করছে। এ থেকেই বোঝা যায় এটা শুধু ভূরাজনৈতিক সমস্যা নয়, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। মুসলিম সভ্যতা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে বহুদেশীয় এই সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সচিত্র প্রমাণ ও বাস্তবতা প্রতিদিন আমাদের সামনে আসছে।’

বাবুনগরী বলেন, ‘আরাকান ভূখণ্ড থেকে মুসলিম জাতিসত্তাকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করে দেবার হীন উদ্দেশ্যে পূর্বঘোষিত ও পরিকল্পিত গণহত্যা চালানো হচ্ছে। দেশটির সামরিক বাহিনী বেসামরিক বৌদ্ধ জনগণকে অস্ত্রে সজ্জিত করে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করছে। গ্রামের পর গ্রাম, পাড়া-মহল্লা ও বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আরাকানে এই গণহত্যার সংবাদ বিশ্বমিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। দুই-চারটি সচিত্র সংবাদ দেখলেই কোনো বিবেকবান মানুষ স্থির থাকতে পারেন না। অথচ মুসলিমদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ সরকারপ্রধান ক্ষমতার মোহ ও রাজনৈতিক স্বার্থে মিয়ানমার সরকারের একতরফা হত্যাকাণ্ড ও বর্বরোচিত অত্যাচারের ব্যাপারে বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।’

সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে হেফাজত মহাসচিব বলেন, ‘একটি মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো, সারা দেশের সর্বস্তরের নাগরিক, দেশি-বিদেশি মুসলিম এনজিও সংস্থাসহ সবার জন্য রোহিঙ্গাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো ও বিতরণের সুযোগ উন্মুক্ত রাখুন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তথা সর্বস্তরের মুসলমানদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে মিয়ানমার সরকারের গণহত্যা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করুন। মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি কর্তৃক বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভূমি মাইন স্থাপন ও বাংলাদেশের দিকে গুলি ছোড়ার যে স্পর্ধা দেখানো হয়েছে তার সমুচিত পাল্টা জবাব দিন। গোটা দেশের মানুষ সীমান্ত রক্ষী বিজিবির সাথে রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ, জুনায়েদ আল হাবিব, আনাস মাদানী, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মঈনুদ্দীন রুহী প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031