মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি কার্ড’ নিতে বাধ্য করছে। রাখাইনের পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে রোহিঙ্গাদের এ কার্ড জোর করে ধরিয়ে দিচ্ছে। আর এতে অস্বীকৃতি জানালে হত্যা ও দেশ ছেড়ে যাওয়ারও হুমকি দিচ্ছে তারা।গতকাল মঙ্গলবার টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রধান সড়কের পাশে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এসব কথা জানান মোহাম্মদ মুছা আলী (৫০)। তার বাড়ি মিয়ানমার বুচিডং টাউনশিপের সাংগুবাইন গ্রামে। তিনি বলেন, ‘আমি
একজন রোহিঙ্গা; কিন্তু মিয়ানমার সেনারা জোর করে বাঙালি বানাতে চায়। গত শনিবার বুচিডং টাউনশিপের সাংগুবাইন ও পুমালি এলাকায় ঢুকে গ্রাম ছাড়তে নির্দেশ দেয় সেনারা। এর পরও যদি এখানে থাকতে চাও তাহলে সবুজ রঙের এ কার্ড নিতে হবে। না হলে সবাইকে মেরে ফেলা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর ভয়ে কার্ড নেওয়ার সম্মতি জানালে সেনাবাহিনী চলে যায়। তবে আমরা বুঝতে পেরেছি, এটা সেনাবাহিনীর নতুন ষড়যন্ত্র। তাদের ভয়ে গ্রামের লোকজন বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।’

দেড় মাস ধরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ দিন দিন বাড়ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আহত ও অসুস্থ। সদ্য বাংলাদেশে আসা বুচিডং টাউনশিপের সাংগুবাইন গ্রামের মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার (৩৫) জানান, তার গ্রামে প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি রয়েছে। ১৫ দিন আগে সেখানে সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় এলাকার ২০ জনের মতো যুবককে ধরে নিয়ে যায়।

তিনি জানান, গত শনিবার সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের একটি দল গ্রামে ঢুকে সবাইকে বড় একটি গাছের নিচে বসিয়ে রাখে। তারা সবার উদ্দেশে বলে- এখানে থাকলে হলে বাঙালি লেখা কার্ড নিতে হবে, না হলে সবার ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। যে কার্ড নেবে, তার কিছুই হবে না। এ কার্ড যে নেবে না তাদের পরিণতি ভালো হবে না বলে হুমকি দেয় তারা।

গতকাল স্বামী ও চার সন্তান নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে এপারে আসেন ইয়াছমিন আক্তার নামে এক রোহিঙ্গা নারী। তিনি জানান, মিয়ানমার সেনারা এখন মারধর না করলেও বাড়িঘরের মালপত্র লুটপাট চালাচ্ছে। ফলে খাবারের অভাবে রোহিঙ্গারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অধিকাংশ বাজার বন্ধ, ত্রাণকর্মীদেরও সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের নেতা আবদুল মতলব বলেন, ‘মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের অনেক আগে থেকেই বাঙালি বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, যা এখনও অব্যাহত রেখেছে। এখন মিয়ানমারে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের গুলির ভয় দেখিয়ে জোর করে অবৈধ বাঙালি লেখা কার্ড নিতে বাধ্য করছে। তাই আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে।’

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ কে আনোয়ার বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর এখনও সেনারা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মঙ্গলবারও এই সীমান্ত দিয়ে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031