আজ ছয় দিন হল ভারতে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করতে এসেছি । গত সোমবার সফল সার্জারি হয়েছে। অপারেশনের আগে হাসপাতাল থেকে জানানো হল, চার ব্যাগ ও পজেটিভ ব্লাড ডোনার রেডি রাখতে। এই বিদেশ বিভূঁই এ কোথায় পাব ডোনার? ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করলাম, ওরা বলল রক্তের প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশনের জন্য ফ্রেশ ব্লাড লাগবে, সুতরাং ডোনারের বিকল্প নেই। আমার অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে ওরা হাসপাতালের রেজিস্ট্রার বই চেক করে গোটা বিশেক ফোন নম্বর দিল। এরা সবাই সোশ্যাল ওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত, নন প্রফেশনাল, ভলান্টিয়ার ব্লাড ডোনার।

ফোন দেয়া শুরু করলাম, গোটা পাঁচেক নম্বর বন্ধ, দু’তিনটা কল রিসিভ করল না। প্রথম ডোনার হিসেবে রাজি হলেন আশিষ দেব, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, তারপর কে সি দাস, ভারতীয় বিএসএফ এর জওয়ান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি পড়ুয়া ছাত্র রাজীব সূত্রধর আর সবশেষে ভারতীয় মুসলিম শফিকুল ইসলাম। শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে এদের মহানুভবতা ছোট করতে চাইনি, টাকা পয়সা তো বহু দূর কি বাত, গাড়ি ভাড়াটা পর্যন্ত এদের দিতে পারিনি বহু চেষ্টা করেও। আশিষ দা যাওয়ার আগে বলে গেলেন হিউম্যানিটি কি পয়সা দিয়ে কেনা যায় দাদা?

রাজীব দা এসেছিলেন ইউনিভার্সিটি হোস্টেল থেকে, ১৫ কিলোমিটার জার্নি করে, কি হত না আসলে?

শফিক ভাই শুধু নিজেই আসেনি ছোট ভাইটাকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। একই রক্তের গ্রুপ, ইনকেস যদি বেশি রক্ত লাগে। তবে ছোট জনের বয়স এখন ১৮ হয়নি। আমাকে এসে চুপিচুপি বলে, ‘ভাই আমার কিন্তু এখনও ১৮ হয় নাই, এইটা বললে ওরা রক্ত নেবে না, আপনার কিছু বলার দরকার নাই, আমি চুপচাপ রক্ত দিয়ে চলে যাই।’- আরে বলে কি পাগলা! এতো ভালবাসা তো আমার প্রাপ্য না।

বাবা আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে ভাল আছেন। হিন্দুর রক্তের সঙ্গে মুসলমানের রক্ত মিশতেও কোনো সমস্যা হয়নি, আমি মুসলমান বলে কেউ রক্ত দিতেও নারাজি হয় নাই। এ পৃথিবীর আপামর মানুষই আসলে অসাধারণ। তাদের কাছে মানবতা সবার আগে। গুটিকয়েক নস্ট পলিটিশিয়ান, আর ততোধিক নোংরা কিছু মানুষ ধর্ম দিয়ে মানুষের মাঝে শুধুশুধুই বিভেদ টানতে চায়। এ দারুণ ধরনীতলে সৃষ্টিকর্তার ইনসানগুলো আসলেই অনন্য সাধারণ।

ব্যবস্থাপক, লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ

লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031