ধর্ষণ একটি নিত্যদিনের খবর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির কাছে । আফগানিন্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান প্রায় প্রতিটি দেশেই ধর্ষণের নানারূপ আমাদের কাছে আসে। কখনও তা গণধর্ষণের আকারও ধারণ করে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের কথা বার বার তুলে ধরা হয়েছে। সেই তালিকায় মালদ্বীপ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালের নামও রয়েছে।

বাংলাদেশ এবং নেপাল সরকার এবার ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশের কথা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে চায় না কেউই। একজন ধর্ষণকারী কোন পথে ধর্ষণ করলেন সেদিকে বিশেষ নজর থাকবে।

তাই বিষয়টি এতটা সহজও নয়। দ্যা ডিপ্লোম্যা্টে প্রকাশিত একটি খবর অনুসারে বলা হয়েছে- ইউনাইটেড নেশনের সার্ভের বলছে, বেশিরভাব ধর্ষণের ক্ষেত্রের ধর্ষণকারী অতি সন্তর্পনে নিজেকে আড়াল করে রাখেন। আইনের অছিলায় তারা শাস্তি কমানোর চেষ্টাও করেন।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ক্রমশই বেড়েছে। ২০১৭ সালে ১২১টি এবং ২০১৮ সালে ১৮৬টি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আদালত। এই সমস্ত মৃত্যুদণ্ডের প্রায় ৫৩ শতাংশই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। এর ফলে ভারত সরকার রীতিমতো চিন্তিত। কোন পথে সমাধান মিলবে তা নিয়ে বহু চর্চাই হয়েছে। আইন দিয়েই কি এবিষয়ে সমাধান করা যাবে, নাকি ‘রাখীবন্ধন’করে ধর্ষকদের মনের চিন্তাভাবনা দূর করা যাবে।

বিবিসির একটি রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে ধর্ষকরা নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে বেঁচে যান। আবার অনেক সময় ধর্ষিতা পুলিশের কাছে মামলা নথিভুক্ত করতে চান না। ফলে সেখানেও পুলিশের অসহায়তার মাত্রা বাড়ে। ধর্ষিতাকে যে নজরে সমাজ দেখে তা থেকে যদি না বেরিয়ে আসা যায় তাহলে সমাজে তারা কিভাবে মাথা উঁচু করে থাকবে। সমাজে নিজের মান রক্ষা করতে গিয়ে বহু ধর্ষিতাই পুলিশের কাছে যান না। ভারতের মতো জনবহুল দেশে বেশিরভাগ ধর্ষকরা তাই বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ানোর সাহস দেখান। ধর্ষণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড না থাকার ফলে ধর্ষকদের মনে বাড়তি সাহস যোগায়। একমাত্র মৃত্যুভয়ই তাদেরকে এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে।

লাহোরে সম্প্রতি একটি ঘটনা থেকে দেখা গেছে, দুই সন্তানের সামনেই তার মাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ নিজেই ছিল অভিযুক্ত। তবে কায়দা করে সে নিজের ঘাড় থেকে সমস্ত দোষ ঝেড়ে ফেলেছে।

আমাদের সমাজ বর্তমানে এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সকলকেই এবিষযে সচেতন থাকতে হবে। ধর্ষিতার আর্থিক পরিস্থিতিও তাকে সঠিক পথে মামলা করা থেকে অনেক সময় বিরত করে।

উত্তরপ্রদেশের হাথরাথ ধর্ষণকাণ্ড সমগ্র ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বর্তমান শাসক দল বিজেপির নেতা এরসঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকেও রেয়াত করেনি বিজেপি। ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ধর্ষিতার দেহটি রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা- এই মামলাকে আরও মাত্রা দিয়েছিল। মৃত্যুদণ্ড শেষ কথা না হলেও ধর্ষণ রোখার ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে। তবে কবে এই ধর্ষণ বিশ্ব থেকে সরবে তা বোধহয় কেউই হলফ করে বলতে পারেন না। সেখানে মৃত্যুদণ্ডই কি একমাত্র পথ, ওঠছে প্রশ্ন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031