প্রেম শুরু হয় হোয়াটস অ্যাপ-ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করতে করতে । অতঃপর প্রেমিকার আহ্বানে ছুটে আসে তরুণ। কিন্তু এসেই ফেঁসে যায়। কারণ যার ভাবনায় তরুণের নিদ্রাহীন রাতযাপন সে প্রেমিকা আসলে ছিল একটি ব্ল্যাকমেইল চক্রের সদস্য। এ চক্রে আছে পুরুষ সদস্যও। চক্রের মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার মতো আরো অনেক তরুণকে ডেকে আনে। এরপর পুরুষ সদস্যসহ মিলে আটকে রাখে। তারপর মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এমনকি কথিত প্রেমিকার সাথে তরুণকে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলতেও বাধ্য করে। পরে সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তরুণের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের অর্থ।
সম্প্রতি এমন অভিযোগ পেয়ে মাঠে নামে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। পরে নগরের কোতোয়ালী মোড় এবং চেরাগী মোড় থেকে গত শনিবার রাতে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়কারী চক্রটির দুই কিশোরী সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন রোববার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ধৃতরা হচ্ছেন পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার সাত নম্বর রোডের মিল্লাত ভবনের মৃত হোসেনের ছেলে মো. সাবের হোসেন শান্ত (২১), গ্রিনভিউ আবাসিক এলাকার তিন নম্বর রোডের ৫৬ নম্বর বাসার রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. মাঈনুল (২১), ডবলমুরিং থানার ঝর্ণাপাড়া এলাকার দুই কিশোরী যাদের উভয়ের বয়স ১৭।
পুলিশ জানায়, এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে আরো তিনজন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। নগরের চকবাজার এবং কোতোয়ালীতে দুইটি বাসায় ফাঁদে ফেলা তরুণদের আটকে রেখে বিবস্ত্র করে ছবি তোলে চক্রটি। আটকে রেখে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণও আদায় করে তারা। অভিযান চালানোর সময় ফারুক টাওয়ার থেকে মো. নাসির উদ্দিন নামে এক ভুক্তভোগীকেও উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন সিএমপির (ডিবি-পশ্চিম ও বন্দর ) উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন। তিনি বলেন, এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করি। এ চক্রটিতে আরো তিনজন সদস্য আছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, চক্রের পুরুষ সদস্যদের রিমান্ডে আনা হবে। বাকি দুইজন শিশু হওয়ায় রিমান্ড চাওয়া যাবে না।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য দিয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েগুলো মাদকাসক্ত। নেশার জন্য তারা ভালোমতে কথাও বলতে পারছিল না। সবাই শিক্ষার্থী বললেও কোথায় পড়ালেখা করে সে বিষয়ে মুখ খুলেনি। রিমান্ডে আনলে বিস্তারিত জানা যাবে। চক্রের বাকি সদস্যদের বিষয়েও তথ্য জনা যাবে।
তিনি বলেন, এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছিল তার বিবস্ত্র ছবি তোলা হয়েছে। ধৃতদের মোবাইলে সেই ভুক্তভোগীর ছবি পাওয়া গেছে। যেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় সেখানে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, চক্রটির প্রতারণার বিষয়েও তারাও জানত। কিন্তু প্রতিবাদ করলে উল্টো ফেঁসে যায়। তাই ভয়ে কেউ আর অভিযোগ করেনি।
মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ধৃতরা পারিবারিকভাবে অত স্বচ্ছল নন। কিন্তু এদের হাতে আইফোনের লেটেস্ট মডেল দেখা গেছে। আমাদের ধারণা এ সংখ্যা বেশি হতে পারে। এখান থেকেই বুঝা যায় তারা নিয়মিতই ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। প্রাথমিকভাবে তারা এর আগে তিনজনের সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করেছে বলে স্বীকার করে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031