আজ ঈদ। কিন্তু হাসপাতালের করিডোরে আজও শান্তা। একটু পরেই রোগীকে ঔষধ খাওয়াতে হবে। সময় মতো ইনজেকশন, স্যালাইন। সবই তাকে ঘড়ির কাঁটার মিনিট, সেকেন্ড, ঘণ্টার সাথে তাল মিলিয়ে করতে হয়। শান্তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের চাষারায়।

ডিপ্লোমা নার্সিং শেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র নার্স হিসেবে যোগদান করেছেন ২০১৬ সালে। তিন ভাই বোনের মধ্যে শান্তা সবার ছোট।

বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মেজ ভাই বাবার নিজস্ব ব্যবসা দেখাশোনা করেন। পরিবারের ছোট সন্তান হওয়াতে ঈদে-কোরবানিতে শান্তার গুরুত্বটা ছিল বরাবরই বেশি। ছোট সময়ের ঈদের স্মৃতিচারণ করে শান্তা বলেন, ঈদ হোক আর কোরবানি। আগের দিন থেকে হাতে মেহেদী পড়া ও হাত পায়ের মেনিকিউর পেডিকিউর নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। মা সংসারের কাজে হাত লাগাতে বললে মাকে বলতাম রাখো তো কাল ঈদ আমাকে বিরক্ত কোরোনা। অথচ এখন ঈদের দিনের সকাল শুরু হয় হাসপাতালের রোগিদের ঔষধ খাওয়ানোর মধ্যে দিয়ে। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো।

বাবা-মা বিশেষ করে ভাইয়া আপুকে খুব মিস করতাম। এখন অনেকটা সয়ে গেছে। ঈদের দিন রোগিদের কাজ শেষ করে বাসায় সবার সাথে ফোনে কথা বলি। এরপর তিন-চার বন্ধু মিলে রমনা পার্ক ও শিশুপার্কে ঘণ্টা খানিকের জন্য ঘোরাঘুরি করি। দুপুরে আজিজ সুপারের অন্তরে অন্তরে রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে আবার কর্মস্থলে ফিরে আসি। তবে যখন খুব বেশি খারাপ লাগে তখন মনে মনে মাদার তেরেসাকে স্বরণ করি।

পশ্চিম তেজতুড়ি বাজারের নিবেদিকা ছাত্রী হোস্টেলের নিরাপত্তাকর্মী মো. খাজা বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে হোস্টেলে চাকরি করি। সবাই যদি ঈদে বাড়ি যায় তাহলে হোস্টেলের নিরাপত্তায় কে থাকবে বলেন। ঈদের ১ সপ্তাহ আগে বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছি। এখন ঈদের বন্ধের দিনগুলোতে ডিউটি করবো। আবার হোস্টেল খুললে বাড়িতে গিয়ে ১ সপ্তাহ থেকে আসবো। ঈদের বন্ধে কোথায় খাওয়া দাওয়া করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাকার ব্যবস্থা হোস্টেলেই কিন্তু খাওয়ার জন্য মালিক ১৫শ টাকা দিয়ে গেছেন। এটা দিয়েই খাওয়া দাওয়া চালাতে হবে। ঈদের দিন সকালে বাসায় ফোন দিয়ে ছেলে-মেয়েদের সাথে কথা বলি। এরপর আমরা কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী মিলে অল্প কিছু গরুর মাংস কিনে নিজেরাই রান্না করি। সাথে থাকে ভুনা খিচুরি।

বাস চালক সুলতান বলেন, আমাদের আবার ঈদ কিসের। পেটে খাবার আর পকেটে টাকা না থাকলে কেউ জিগায় (জিজ্ঞেস করে) না। ঈদের আগে ও পরে ১ সপ্তাহ আমাদের নাওয়া-খাওয়া আর ঘুম কোনটাই ঠিক থাকে না। প্রতিবছরই ঈদের দিন সকালে ট্রিপ নিয়ে ঢাকার বাইরে থাকি। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে খাওয়া দাওয়া করি। এরপর ঘণ্টাখানেকের জন্য ঘুমাই। মাঝে একদিন যাত্রীর চাপ কম থাকলেও পরের দিন থেকে আবার ডিউটি শুরু হয়ে যায়। বউ বাচ্চাকে ঈদের আগেই গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রথম দিকে বউ ও ছেলে মেয়েরা বিষয়টা মানতে পারতো না। পরে অবশ্য তারা বুঝে গেছে এটা আমার রুটিরুজির একটা অংশ।

পুলিশ কনসটেবল শহিদুল বলেন, আমাদের কষ্ট কে বুঝবে বলেন। বলতে গেলে ২৪ ঘণ্টাই আমাদের ডিউটি করতে হয়। গত ঈদে পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। এই ঈদে আমার কলিগ ছুটিতে গেছে আমি ডিউটি করছি। ঈদের পরে ছুটিতে যাব। এমনও ঈদ গেছে যখন নামাজের সময়েও ডিউটি করতে হয়েছে। কারণ, ঈদগাহে ডিউটি পরলে নামাজ পরার খুব একটা সুযোগ থাকে না। এ বছর বাসা বাড়ির গলিতে মোবাইল টহলের দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঈদের দিন সকালে নামাজ পরে বাসায় বাবা-মা ও ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে আবার রাস্তার ডিউটিতে বেরিয়ে পরবো। এটাই আমাদের জীবন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031