যাদের পূর্বে কোনো মানসিক রোগ ছিল না। সেই অসুখগুলো এবং তাদের লক্ষ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। এসময়ে পুরানো মানসিক রোগী ( যেমন ডিপ্রেশন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, প্যানিক ডিজঅর্ডার, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার) যারা ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সুস্থ ছিলেন, তাদের মধ্যে এই আতঙ্কের আবহে পুরনো সমস্যাগুলো আবার ফিরে আসতে পারে।

আবার বহু মানুষের মধ্যে নানা রকম মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে,

প্যানিক অ্যাটাক এই অসুখে হঠাৎ করেই রোগীর বুক ধড়ফড় করে এবং হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পায়, হাত-পা থরথর করে কাঁপে, সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়, শরীর অস্থির করে, সারা শরীরে ভীষণ গরম অনুভূত হয় এবং সর্বোপরি মনে হয় যেন এক্ষুনি প্রাণ বেরিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়ে যাবে। এই রকম সমষ্টিগত তীব্র কষ্ট ১০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে কমে যায়। দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার এইরকম অ্যাটাক হতে পারে।

অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিজসঅর্ডার এই অসুখে নানা রকম ব্যবহারিক অসংলগ্নতা দেখা দিতে পারে। যেমন পারিপার্শ্বিক সমস্যার প্রতি (এক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস এর সমস্যা) কম প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়া, পরিবেশের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়া, সব কিছু ভুলে যাওয়া। এক কথায় বললে, এই মহামারি থেকে হঠাৎ করে সম্পূর্ণরূপে নির্লিপ্ত হয়ে যাওয়া।

কনভার্সন ডিজঅর্ডার এ ক্ষেত্রে রোগী ঘনঘন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অজ্ঞান অবস্থায় রোগী চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকেন। এই রকম অবস্থা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সেই সময়ে রোগীকে ডাকাডাকি করলেও সাড়া পাওয়া যায় না। তবে এই মূর্ছিত অবস্থায়, রোগী সব কিছু শুনতে পান কিন্তু কথা বলতে পারেন না, চোখ খুলতে পারেন না।

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার এ ক্ষেত্রে রোগীর মনের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কারও মন অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কেউ মাত্রাতিরিক্ত টেনশন করেন। আবার কারোও আচরণগত সমস্যা (কান্নাকাটি করা, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা) দেখা দেয়।

হাইপোকন্ড্রিয়াসিস এ ক্ষেত্রে রোগীর যদি করোনা সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দেয়(গলা ব্যথা, সিজনাল জ্বর সর্দি), তবে ভীষণ উতলা হয়ে পড়ে এবং মনে করেন যে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে একই চিন্তা তার ঘুরপাক খেতে থাকে এবং নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য (এ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা) উতলা হয়ে ওঠেন।

স্লিপ ডিজঅর্ডার এই সময় নানা রকম ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, ঘুম আসতে দেরি হওয়া, বিছানায় শোয়ার পর নানা দুশ্চিন্তা মাথায় আসা, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া, ঘুমের মধ্যে ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখা, ঘুমের মধ্যে কথা বলা ইত্যাদি।

কীভাবে এই অসুখের চিকিৎসা করা সম্ভব? নোভেল করোনাভাইরাসের প্যানডেমিক এর ফলে উপরিউক্ত যে সব মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তার বেশির ভাগই তাৎক্ষণিক, অর্থাৎ এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দূর হয়ে যাওয়ার পর, বেশিরভাগ মানুষেরই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে চলে যাবে।

এই মুহূর্তে মানুষকে নানারকম মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, খুব দ্রুত অ্যাংজাইটি কমানোর যে ওষুধ রয়েছে (অ্যাংজিওলাইটিক) সেগুলো স্বল্পমেয়াদী (তিন থেকে ছয় সপ্তাহ) সময়ের জন্য প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে। এর ফলে মানুষ সাময়িক স্বস্তি পাচ্ছেন। এ ছাড়াও ফোনের মাধ্যমে যতটুকু কাউন্সেলিং করা সম্ভব (ব্রিফ সাইকোডায়নামিক সাইকোথেরাপি), তা করে রোগীকে সাহায্য করা হচ্ছে। খুব অল্প মানুষ, যাদের সমস্যাগুলি থেকে যাবে, তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করতে হতে পারে।

এই আবহে রোগীরা কী ভাবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন? রোগীকে দেখে চিকিৎসা শ্রেয়। তবে এই ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে রোগী ও তার বাড়ির লোক চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে এলে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে এবং লকডাউন সফল হবে না। সে জন্য এই সময় টেলি কনসাল্টেশন (টেলিফোন ,ভিডিও কলিং, হোয়াটসঅ্যাপ মাধ্যমে) প্রয়োজন।

যে সমস্ত পুরানো রোগীরা ওষুধ খেয়ে ভাল আছেন, তারা ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওষুধ চালিয়ে যেতে পারেন। যদি পুরনো রোগীর নতুন করে কোনো সমস্যা হয় অথবা কোনো সুস্থ মানুষের(যার পূর্বে কোনো মানসিক রোগের ইতিহাস নেই) মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, তবে টেলিফোন অথবা ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে ডাক্তারকে জানাতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তারের ফোনের মাধ্যমে (হোয়াটসঅ্যাপে প্রেসক্রিপশন করে) সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবেন। যদি একান্তই সমস্যার সমাধান না হয়, তবে কোনো প্রটেক্টেড জায়গায় (সরকারি হাসপাতাল অথবা প্রাইভেট নার্সিং হোম) ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031