বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রতিভা; বাঙালি মননে আবদ্ধ থাকেন যিনি প্রতিদিনই। তিনি বরাবরই ছিলেন এক স্রষ্টা, যাঁর সৃষ্টির জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ থাকে এই বিশ্ববাসী। তাঁর কলমের পরশে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে শিল্প সাহিত্যের এই বৃহৎ জগতে! সুরেলা যন্ত্র বেহালার বাদন শৈলীতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে চট্টগ্রামে বেহালা বাদকদের একমাত্র সংগঠন ভায়োলিনিস্ট’স চট্টগ্রামের শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করেছেন বেহালার সুরে, নৃত্যের তালে, আলোকিত ব্যক্তিদের কথামালায়। ‘রবিরাগ’ শিরোনামে সংগঠনটি এই মনোজ্ঞ বেহালা সন্ধ্যার আয়োজন করে।

সংগঠনের সভাপতি বিশিষ্ট বেহালা বাদক ডা. তন্ময় সরকারের সভাপতিত্বে এবং বাচিক শিল্পী ও উপস্থাপক প্রবীর পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সংবাদ ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট বেহালা বাদক প্রিয়তোষ বড়ুয়া।
সংবাদ ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, সঙ্গীত এমন একটা মাধ্যম যা মানুষের সুখেও সঙ্গী হয়, দুঃখেও সঙ্গী হয়। জীবনের মধ্যে সঙ্গীতের প্রতিফলন ঘটে। যারা সুরের দিকে আকৃষ্ট হয় তারা কখনো অসুন্দর ও অপসংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট হয় না। আমি গানের চাইতে সুর শুনতে আগ্রহী বেশি। বেহালার মতো কঠিন একটি বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সঙ্গীত যতদিন থাকবে, ততদিন রবীন্দ্রনাথ থাকবেন। তাঁর গান আমাদের প্রাণিত করবে, উজ্জীবিত করবে। রবীন্দ্রনাথের গানের পাশাপাশি অন্যান্য বরেণ্য ব্যক্তিদের গানকেও বেহালার মাধ্যমে উপস্থাপনের আহ্বান জানান তিনি।
প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা বলেন, অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বিস্তৃত করেছেন বাংলা সাহিত্যের পরিসর। অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে, জীবন-সংগ্রামের প্রতিটি ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালীর মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্য দিয়ে বাঙালী মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়।
রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীত রচয়িতা, সুরস্রষ্টা, গায়ক ও চিত্রশিল্পী। সৃষ্টিশীলতার সমান্তরালে তিনি ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি ও সমাজভাবনা সমানভাবেই চালিয়ে গেছেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বড়ুয়া বলেন, নতুন প্রজন্মকে বেহালা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে এই সংগঠনের উদ্ভব। সৃষ্টিশীলতায় অনন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই আয়োজন তখনই সার্থক হবে, যখন বর্তমান প্রজন্ম এ ধরনের অনুষ্ঠানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সুন্দর বিনোদন চর্চার দিকে আকৃষ্ট হবে।
অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয় বেশকিছু সঙ্গীতকে বেহালার মূর্চ্ছনায় ভরিয়ে তুলেন শিল্পী পৃথা রায়, আয়ুষী দে, অনিন্দিতা দেব, লাবণ্য সরকার, তুষিত দেবজিৎ বড়ুয়া ম্যাঙ্মি, ডা. তন্ময় সরকার, অদ্বিতীয়া দেব, সৌম্যদীপ্ত বিশ্বাস, তাসলিম হুমায়রা শমী, নিঝুম নন্দী, পর্ণা বড়ুয়া, প্রিযতোষ বড়ুয়া কমল কৃষ্ণ দাশ, রুহামা গিলবার্ট, সেঁজুতি বণিক, অপরূপা বড়ুয়া, শীর্ষদীপ বিশ্বাস প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031