রাজধানীর গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পরে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যান। এরপর পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগ দেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সর্বশেষ নির্বাচনে পরিচালক পদে জয়লাভ করেন চমকে দেন সবাইকে। জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও হেলেনা ফ্যাসনের মালিক তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ স্পোরটস জার্নালিস্ট কমিউনিটির সদস্যও তিনি। জয় অটো গার্মেন্টস লিমিটেড, নীট কনসার্ন প্রিন্টিং, জে সি এমব্রোয়োডারির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হেলেনা এখন রাজনীতিতে আসার চিন্তা করছেন।

বড় পরিসরে জনসেবা করতেই তিনি যুক্ত হবেন রাজনীতিতে। ঢাকাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপে এই নারী উদ্যোক্তা তার ‘সিস্টার হেলেন’ হয়ে ওঠার গল্প, রাজনৈতিক ভাবনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।

শোনা যাচ্ছে, আপনি রাজনীতিতে আসছেন।

আমার স্বপ্ন সারা জীবন মানুষের সেবা করা। আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে মানুষের সেবা করছি। কিন্তু আরও বড় পরিসরে মানুষের সেবা করতে রাজনীতিতে নামতে চাই।

কোন দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন?

আমি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না। স্বতন্ত্র হিসেবে রাজনীতি করব।

কোনো দলে যুক্ত না হয়ে কীভাবে রাজনীতি করবেন?

আমি রাজনীতি করতে চাই যদি আমাকে জনগণ চায়। সেটা হবে একেবারেই নির্দলীয় এবং লোগো ছাড়া।

সেটি কীভাবে করবেন?

আমি ‘সিস্টার হেলেন’ লোগোতে নিজের নীতিতে স্বতন্ত্র রাজনীতি করতে চাই। আমি কাজ করতে যাই স্বাধীনভাবে। দল-মতনির্বিশেষে একজন সিস্টার হেলেন হয়ে, স্বার্থত্যাগী হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।

রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়বেন?

সবাই এমপি-মন্ত্রী হতে চায়। কিন্তু আমার সেই ইচ্ছা বা আগ্রহ নেই। আমি বড় পরিসরে দেশের জন্য কাজ করতে চাই। তাই এই পথ বেছে নিচ্ছি।

আপনি তো অল্প সময়ে এফবিসিসিআইয়ের নেতা হয়েছেন?

আল্লাহ ও জনগণের দোয়ায় এফবিসিসিআই নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরিচালক হয়েছি। আমি মাত্র এক মাসের মাথায় এফবিসিসিআইতে মেম্বার হয়ে ইলেকশন করেছিলাম দুঃসাহসিকতার সঙ্গে। এই সংগঠনের কেউ আমাকে চিনত না, জানত না। একমাত্র আল্লাহ ও জনগণের ভালোবাসায় এটি সম্ভব হয়েছে।

আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কেমন চলছে?

আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে। আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ১৮ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকি। খুবই ভালোভাবে চলছে আমার প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পের পৃথক পৃথক খাতের  চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন আপনিকীভাবে এত দূর এলেন?

আমি ১৯৯৬ সালে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছি। শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টে সব সময় তাদের পাশে থেকে কাজ করেছি।

শুরুর কথা বলুন?

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয় আমার। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির কারণে বিয়ের পর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করি। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকলেও নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদ থেকে শুরু করি ব্যবসা। ছোট্ট একটি কারখানার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে একে একে ছয়টি কারখানা গড়ে তুলেছি।

আপনার কী কী ব্যবসা রয়েছে?

প্রিন্টিং, এমব্র্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার ও ওভেন গার্মেন্টস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমি যুক্ত। সম্প্রতি গ্রিনফ্যাক্টরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। নারীদের মধ্যে কাজের একাগ্রতা, গতি ও স্পৃহা আছে। নারীরা যে কাজ করেন, তা অত্যন্ত মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে করেন। নারীরা নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলছে। তবু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনো নারীদের অংশগ্রহণে ঘাটতি রয়েছে।

একজন গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন, কীভাবে সম্ভব হলো?

একজন নারীকে ঘরের বাইরে কাজ করতে হলে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। প্রথমেই বাধা আসে পরিবার থেকে। এরপর সমাজ আর রাষ্ট্র তো আছেই। আমি নিজেও নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আমি কখনো আত্মবিশ্বাস হারাইনি। লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি। সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে এ দুটি জিনিস খুব জরুরি।

নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথে কী বাধা?

ঋণ গ্রহণ করতে নারী উদ্যোক্তাদের পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এতে অনেক নারী উদ্যোক্তা ব্যবসাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন। আমরা এসব সমস্যা কাটাতে কাজ করছি। এ জন্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন।

ব্যবসার পাশাপাশি আপনি তো সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত।

হ্যাঁ। ব্যবসার বাইরে বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গেও আমি সম্পৃক্ত। রোটারি ক্লাবের একজন মেজর ডোনার। এর আগে মেজর ডোনার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছি। এছাড়া গুলশান সোসাইটি, গুলশান জগাসর ক্লাব, ইন্টারন্যাশনাল জন্টা ক্লাব, ডব্লিউইভি, উত্তরা লেডিস ক্লাবের সক্রিয় সদস্য আমি। ইন্টারন্যাশনাল ইনার হুইল কাবের প্রেসিডেন্ট, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল ও গুলশান হেলথ ক্লাবের নির্বাহী সদস্যও। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031