প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন রোববার উচ্চ আদালতে দেয়া প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের বিষয়ে ইঙ্গিত করে , আর যাই হোক পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা আমরা কিছুতেই সহ্য করবো না। আমরা এখন দেখতে পারছি, উচ্চ আদালত থেকে নানা বক্তব্য, রাজনৈতিক কথাবার্তা, হুমকি-ধমকি আসছে। যাদের আমরা নিয়োগ দিয়েছি, প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিয়েছেন সেই নিয়োগ পাওয়ার পর হঠাৎ তাদের বক্তব্য শুনে এবং সংসদ সম্পর্কে যে সমস্ত কথাবার্তা বলা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির রায়ে সংসদ নিয়ে মন্তব্য। এটা কি ধরনের কথা?
ভয়াল ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, সংসদে ব্যবসায়ী আছে সেটাও বলা আছে রায়ে। ব্যবসা করা কি অপরাধ। কোনো ব্যবসায়ী মামলা করলে উচ্চ আদালত কী তাদের পক্ষে রায় দেয় না? তাদের সংসদ সদস্য হওয়ায় অপরাধটা কোথায়? এভাবে সংসদকে হেয় করা, সংসদকে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করা, এর অর্থটা কী? অনেক সংগ্রাম করে আন্দোলন করে এদেশের গণতান্ত্রিক ধারা নিয়ে এসেছি। ’৭৫ পরে ১৯টি ক্যু হয়েছে। সামরিক বাহিনীর অফিসাররা সৈনিকদের হত্যা করেছে। সাধারণ নেতাকর্মীদের হত্যা-গুম করা হয়েছে। আমরা সেই অবস্থা থেকে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে এসেছি। প্রধান বিচারপতির রায়ে সংসদ সদস্যের নিয়ে বক্তব্য, এটা কোন ধরনের কথা। আমাদের সংবিধান আছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সংবিধান পেয়েছি। যা মূল সংবিধানে ছিল সেটা উনার পছন্দ না। ওনার পছন্দ সাময়িক শাসক জিয়াউর রহমানের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে দিয়েছেন, সেটা ওনার পছন্দ। কিন্তু সংসদ দ্বারা যে গণপরিষদ সংবিধান তৈরি করে দিয়েছে সেই ধারা ওনার পছন্দ না। সেখানে উনি চাচ্ছেন মার্শাল ল, যেটা করে গেছেন সাময়িক শাসক সেটা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন পুরো আদালতের দায়িত্ব ওনার হাতে দিতে হবে। জয়নুল আবেদীন জজ ছিলেন। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার যে তদন্ত রিপোর্ট উনি দিয়েছেন, সম্পূর্ণ ভুয়া মনগড়া তথ্য দিয়ে। বলতে গেলে, বিএনপি সরকারের ফরমায়েশী তদন্ত রিপোর্ট তিনি দিয়ে গেছেন। এবং তিনি যে দুর্নীতি করেছেন সেই দুর্নীতির তদন্ত দুদক করতে গেছে, দুদকের পক্ষ থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল, সেখানে প্রধান বিচারপতি চিঠি দিয়ে জয়নুল আবেদীনের তদন্ত করা যাবে না বলে জানিয়েছে। দুদক তদন্ত করবে, তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে, আদালতে বিচার শুরু হলে তারপর ওনি কিছু বলতে পারতেন। কিন্তু তদন্তই করা যাবে না প্রধান বিচারপতি হয়ে তিনি কীভাবে বলেন। দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়া, রক্ষা করা প্রধান বিচারপতির কাজ নয়। এটা তো সম্পূর্ণ সংবিধানকে অবহেলা করা, সংবিধান লঙ্ঘন করা। চিঠিতে বলা হয়েছে-তার বিচার করা যাবে না কারণ তিনি অনেক রায় দিয়েছেন। রায় দিলেই বিচার করা যাবে না, কোন ধরনের কথা। এটা কীভাবে হয়। আমার প্রশ্ন তিনি এ চিঠি লিখলেন কীভাবে? তার মানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হলে এখানে কোন বিচার হবে না। বিএনপির সময় এমন এমন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল যার সার্টিফিকেট জাল। জাল সার্টিফিকেট দিয়ে বিচারক হয়ে গেছেন। বিদেশে কূটনৈতিক মিশনের দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে বাথরুমের কাজ সারছিলেন। পুলিশ যখন ধরলো তখন তিনি বললেন আমি জজ সাহেব। তাকে বিএনপির আমলে জজ করা হয়েছে। ছাত্রদলের দুই নেতা দুই কাঁধে নিয়ে রায় পড়ে শুনানো হয়েছে। এরকম জজও নিয়োগ দেয়া হয়েছে যারা আইন মানেনি। আমি মনে করি, কোর্টের স্যাঙ্কটিটি যারা ধ্বংস করেছে তাদের সবাইকে রক্ষা করার জন্যই কী তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল চাচ্ছেন। ওটাতো প্রেসিডেন্টের কাছে যেতে হবে। মানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাটাও হাতিয়ে নেয়া। এটা কোন ধরনের দাবি। কোন ধরনের কথা। আমরা সংসদে আইন করতে গেলে মন্ত্রিপরিষদ থাকে, মন্ত্রণালয় আইন তৈরি করে, মন্ত্রিপরিষদ দেখে, নীতিগত অনুমোদনের পর সেটা ভেটিংয়ে যায়। সেটা আবার অনুমোদন হয়, তারপর সংসদে যায়। উত্থাপন হলে বিরোধী দল আপত্তি তোলে, সেটা আবার সংশোধন হয়, কমিটিতে যায়, কমিটিতে সরকারি দল, বিরোধী দল সবাই থাকে।
আজকে কোর্টের অবস্থাটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তারা: প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমপিরা আইনের সংশোধনীতে অংশ নেন। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সংশোধনী দেয়া হয়। কখনও সরকারি দলের কাছ থেকে সংশোধনী দেয়া হয়। সংশোধনী দেয়ার মধ্য দিয়ে সেই আইন পাস করা হয়। এত যাচাই-বাছাই করে যে আইনটি আমরা করে দিই এবং সংবিধান সংশোধনে টু থার্ড মেজরিটি লাগে। আর সেটাকে এক কলমের খোঁচায় নাকচ করে দেয়া হয়। তার মানে এতগুলো সংসদ সদস্য এতগুলো অফিসার সবাই মিলে যেটা নিয়ে কাজ করলো তাদের কারও কোনো জ্ঞানবুদ্ধি নেই। জ্ঞানবুদ্ধি ওই একজনের মধ্যেই দেয়া হলো। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে আপিল বিভাগের সব জজ স্বাধীনভাবে সব মতামত দিতে পেরেছে কি-না আমি জানি না। সেই সুযোগটা বোধহয় প্রধান বিচারপতি তাদের দেননি। রায়টা পড়লে অনেক কিছু বোঝা যায়। রায়টা পড়ছি। আরো কিছু বাকি আছে। সেটাও পড়বো। তারপর এটা নিয়ে আমরা অবশ্যই পার্লামেন্টে আলোচনা করবো। এখানে দাঁড়িয়ে (আদালতে) এমন এমন কথা ব্যবহার করা হয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক আইনজীবী এটর্নি জেনারেলকে যে জঘন্য ভাষায় গালি দিলেন। কোনো ভদ্রলোকের সন্তান এই ভাষায় গালি দিতে পারেন তা আমার জানা নেই। ড. কামাল হোসেনের মতো মানুষ এটর্নি জেনারেলকে যে ভাষায় গালি দিয়েছেন তা আমার মুখ দিয়ে বলতে লজ্জা হয়। সেই ধরনের বক্তব্য তিনি দিলেন। আজকে কোর্টের অবস্থাটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তারা- সেটাই আমার প্রশ্ন। আজকে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন। এজন্যই তো আজ আদালত, উচ্চ আদালত। তিনি দেশটা স্বাধীন করেছেন বলেই তো আজ এখানে অনেকে বসতে পেরেছেন। তার (প্রধান বিচারপতি) এপয়েনমেন্ট দেয় কে? মাননীয় রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি যাকে নিয়োগ দিলেন তিনি আবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাটা কেড়ে নিতে চাচ্ছেন। যে ক্ষমতা সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে সেই ক্ষমতা কেড়ে নেন কিভাবে। এবং সেটা দেয়া হচ্ছে না বলেই যত রাগ আর গোস্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটর্নি জেনারেলকে যা-তা বলে মন্তব্য করা হচ্ছে। কেন? দুর্নীতিকে রক্ষা করা, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা তো উচ্চ আদালতের দায়িত্ব না। পার্লামেন্টের মেম্বারদের নিয়ে এ ধরনের অশালীন উচ্চারণ করা তো উচ্চ আদালতের দায়িত্ব না। আমরা সবাই বিচার চাইতে যায়। আমরা আশা করি ন্যায়বিচার হবে। কিন্তু ন্যায় বিচার যারা চাইতে যান তারা গালি খেয়ে আসেন।
বহু অবান্তর কথা এই রায়ে দেয়া আছে: প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, পার্লামেন্ট জনগণের প্রতিনিধি। একথাটি ভুললে চলবে না। জনগণের প্রতিনিধিরাই পার্লামেন্টের মেম্বার। এখানে জনগণই হচ্ছে ক্ষমতার মালিক। আমাদের যে সংবিধান জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। সেই সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলা আছে-প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। আর জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকেন। প্রধান বিচারপতি আরেকটি ভুল মন্তব্য দিয়েছেন তার রায়ে-যে ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত নেয় পার্লামেন্ট কতদিন চলবে। কি চলবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল। কেবিনেটে আমরা কখনই পার্লামেন্ট কতদিন চলবে, কি চলবে তা নিয়ে আলোচনাই করি না। আসলে পার্লামেন্টের প্রাকটিস সম্পর্কে যার এতটুকু সামান্য ধারণাও থাকে না সে এই ধরনের কথা লিখতে পারে না যে কেবিনেটে পার্লামেন্ট নিয়ে সব সিদ্ধান্ত নেয়। পার্লামেন্ট চলে সংবিধান অনুযায়ী। আর সংবিধানের ভিত্তিতে কার্যপ্রণালি বিধি আছে। সে কার্যপ্রণালি বিধিতে কার্য উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির প্রধান হলেন মাননীয় স্পিকার। এবং কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সংসদের বিরোধী দলসহ সকল দলের সদস্য। প্রত্যেক পার্লামেন্ট বসার আগে পার্লামেন্টের কি কি বিজনেস, কি কি কার্যক্রম হবে সেটা উপদেষ্টা কমিটিতে বসেই আলোচনা করে ঠিক করা হয়। কখন পার্লামেন্ট বসবে, কত তারিখে বসবে, কয়টার সময় বসবে, কত ঘণ্টা চলবে সব বিষয়ই কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে আলোচনা করেই মাননীয় স্পিকার সিদ্ধান্ত নেন। কেবিনেটের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই। কেবিনেটে এটা নিয়ে আমরা কখনই আলোচনাই করি না। কোনো সিদ্ধান্তই নেই না। এরকম বহু অবান্তর কথা এই রায়ে দেয়া আছে। রায়টা আরো ভালোভাবে পড়া দরকার এবং এর প্রতিটি জায়গায় অনেক কথা বলার অবকাশ আছে। জাতির সামনে এগুলো তুলে ধরতে হবে। এরকম একেকটা কথা লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এতে তো ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা জনগণের কথা বলি। আমাদের জবাবদিহিতা আছে। জবাবদিহিতা আমাদের ওই ভোটারদের কাছে। জনগণের কাছে। ৫ বছর আমাদের সময়। এই ৫ বছর পরই আমাদের জনগণের আদালতে দাঁড়াতে হয়। সেখান থেকে আমরা যদি জনগণের কাজ করি তাহলে জনগণ আবার ভোট দেবে। আর যদি কাজ না করি তাহলে জনগণ ভোট দেবে না।
বিএনপি তো কথায় কথায় উত্তর পাড়ার দিকে মুখ দিয়ে বসে থাকতো: প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন না করে তার দায়িত্ব কার। এটা তো তাদের দায়িত্ব,তাদের সিদ্ধান্ত। ২০১৪ সালের ইলেকশন যাতে না হয়। অস্বাভাবিক অবস্থা যাতে সৃষ্টি হয় সেই প্রচেষ্টা বিএনপি করেছিল। কিন্তু তাদের ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। কারণ বিএনপি তো কথায় কথায় উত্তর পাড়ার দিকে মুখ দিয়ে বসে থাকতো। সেই উত্তর পাড়া থেকেও সাড়া পায়নি। কোনো জায়গা থেকেই সাড়া পায়নি। আর জনগণ তাদের সেই জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই ৫৮২টি পোলিং সেন্টার ধ্বংস করে, স্কুল পুড়িয়ে দিয়েও প্রিজাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে সবকিছু করেও কিন্তু এই নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। কারণ জনগণ সেখানে ভোট দিয়েছে। আজ সবচেয়ে অবাক লাগে আমাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যে আইনজীবী-যিনি কোনো দিন নির্বাচনে কনটেস্ট করে জিততেই পারেননি। জাতির পিতার ছেড়ে দেয়া সিট থেকে যাকে নির্বাচন করায়ে নিয়ে আসা হয়েছিলো এবং আনকনটেস্টে পাস করানো হয়েছিল। যিনি নিজেই আনকনটেস্টে সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি আবার সংসদ সদস্য নিয়ে কথা বলেন। আনকনটেস্টেড কেন হলো? কারণ আমার পার্টিতে ডিসিপ্লিন আছে। যাদেরকে নমিনেশন দিয়েছি তারা ইলেকশনে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনী আইনে আছে-যদি অন্য কোনো প্রার্থী না থাকে যদি একক প্রার্থী হয় তাহলে তাকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়। অন্য দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে প্রার্থী না দেয়, তাহলে সেখান থেকে যিনি নির্বাচিত হয়ে আসেন সেটা তো তার দোষ নয়। আর সেজন্য পার্লামেন্ট নিয়ে তো কোনো বৈধতা বা অবৈধতার প্রশ্ন আসতে পারে না। কারণ নির্বাচনের আইন অনুযায়ীই তো নির্বাচন হয়েছে। সেখানে বিএনপি ইলেকশন করেনি। আমরা যারা ইলেকশন করেছি, অনেক সিটে আমরা সমঝোতা করেছি, অনেক সিটে একজন আরেকজনকে ছেড়ে দিয়েছে। প্রার্থী ছিল যারা তারা নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে এসেছে।
উনার এইসব কথা বলার আগে ওই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিলো: শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন এটা জাতির পিতা বুঝতে পেয়েছিলেন বলেই সংবিধানে রিজার্ভ করেছিলেন। তখন ছিলো সাড়ে ৭ কোটি। এখন জনগণ বেড়েছে। সেই রিজার্ভ সিট এখন ৫০ উন্নীত করেছি। সংরক্ষিত মহিলা এমপিদের পার্লামেন্ট ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। এটা একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। এটা সংবিধান মোতাবেক হয়েছে। সেটা নিয়েও রায়ে মন্তব্য করেছেন। মহিলাদের কেন এভাবে নির্বাচিত করা হয়? আমরা যারা ২২ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। ৫০ জন সংসদ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত। এটা নিয়েও যদি প্রধান বিচারপতি তার সংশোধনীতে মন্তব্য করেন তাহলে আমার একটা প্রশ্ন আছে, রাষ্ট্রপ্রতি নির্বাচন হয় কীভাবে? সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপ্রতিকে নির্বাচিত করেন। সেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন প্রধান বিচারপতিকে। তাহলে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ নির্বাচিত করতে পারবে আর সেই রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিয়োগ পাওয়ার পর সেই চেয়ারে বসেই তার নির্বাচনের কথা ভুলে গেলেন? মহিলা সংসদ সদস্যরা যদি নির্বাচিত হতে না পারেন তাহলে রাষ্ট্রপতি কি করে নির্বাচিত হলো। বিশেষ করে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি বা সিস্টেমে তো এটা আছে। এই প্রাকটিস পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। একেক দেশের গণতন্ত্রে একেক রকম ধারা আছে। যখন একটা ক্রিটিসিজম করবেন তাহলে আরেকটাও তো মানতে হবে। তাহলো যে রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য দ্বারা নির্বাচিত সেই বিষয়ে অর্থাৎ সংসদ নির্বাচন করতে পারবে না মহিলা সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করতে পারবে না। সেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতিকে। উনার এইসব কথা বলার আগে ওই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিলো বা বলেই ওই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিলো। এই পার্লামেন্ট যেহেতু মহিলা এমপি করতে পারবে না। এই পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপতি করতে পারবে না। আর এই রাষ্ট্রপতি যেহেতু আমাকে নিয়োগ দিয়েছে আমি এই পদে থাকবো না বলে দিলেই তো হলো। কাজেই উনার লেখা রায়ে অনেক কিছুই আছে। অনেক কন্ট্রাডিকশন আছে। আমি পড়ে পড়ে যেটা অস্বাভাবিক লাগছে নোট নিচ্ছি। আল্লাহর রহমতে পার্লামেন্টে এটা বলতে পারবো। আমরা যে বিচার পাইনি সে জবাবটা কে দেবে? প্রত্যেক নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। আমি কেন আমার বাবা, মা হত্যার বিচার পাইনি? ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারও পেতাম না। আমরা যখন ক্ষমতায় আসলাম তারপর এটার সঠিকভাবে তদন্ত হয় তার ব্যবস্থা করি। যদিও বিচার শুরু করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এখানে জনগণই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। জনগণের আদালত বড় আদালত। জনগণের আদালতকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে এটা আমরা কিছুতেই সহ্য করবো না: প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু একটা কথাই বলবো যে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করা। সব সহ্য করা যায় কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে এটা আমরা কিছুতেই সহ্য করবো না। পাকিস্তান রায় দিলো দেখে কেউ ধমক দেবে? আমি জনগণের কাছে বিচার চাই। আজকে পাকিস্তানের সঙ্গে কেন আমাদের তুলনা করবে? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেন তুলনা করবে? আর ওই হুমকি আমাকে দিয়ে লাভ নাই। আমরা আইয়ুব খান দেখেছি, ইয়াহিয়া খান দেখেছি, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়াও দেখেছি। ১৫ই ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে যারা সংসদ সদস্য হয়েছিল তার মধ্যে এখনও তো একজন বিচারক। খালেদা জিয়া তাকেও বিচারক বানিয়েছে। কই চিফ জাস্টিস তো তাকে বের করে দেয় নাই। ১৫ই ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। পদত্যাগ করতে হয়েছে। ১৫ই ফেব্রুয়ারি ইলেকশন করেছে ২২শে মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে। তাও জনগণের আন্দোলনের ফলে। আমাদের বিরুদ্ধে তো আন্দোলন করতে গিয়েছিল বরং জনগণ উল্টো তাদেরকে বাধা দিয়ে ঘরে তুলে দিয়েছে। কাজেই একথাটি বাস্তব জানতে হবে। আমি আজ শুধু দেশবাসীর কাছে বলতে চাই যে পাকিস্তানকে আমরা যুদ্ধে হারিয়েছি, যে পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্র সেই পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের তুলনা করবে? আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। কারও কারও বক্তব্যটা কি, কয়টা ফ্লাইওভার হলে আর রাস্তা হলেই উন্নয়ন হলো না। আজকে যে দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, আজকে এদেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে খাবার পাচ্ছে। আজকে এদেশের মানুষ সেই কুঁড়েঘর না অন্তত থাকার মতো ঘর পাচ্ছে। রোগীর চিকিৎসা পাচ্ছে। মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। গ্রামের মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবন মান উন্নত হয়েছে। ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শতভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এগুলোর কিছুই উন্নয়ন উনার চোখে পড়লো না। ওই ফ্লাইওভার আর রাস্তা দিয়ে উনি চলেন না নাকি? বন্যা এসেছে। আমাদের আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল বন্যা মোকাবিলার। একটা মানুষ যেন না খেয়ে থাকে। আমরা আগাম সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছি। আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছি বলেই এটা করতে পেরেছি। এই উন্নয়ন নাকি উন্নয়নই না। তাহলে উন্নয়নটা কিসের? তাহলে কি সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করলে সেটাই কি উন্নয়ন হবে? সেটা আর বাংলাদেশে হবে না। আর যা হবে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে যেটা এখন আছে- যদি কেউ অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে তার বিচার হবে। আর জনগণের আদালতের বিচারই বড় বিচার। সেটাও চিন্তা করতে আমি বলবো। ২১শে আগস্ট হত্যা চেষ্টা হয়েছে। বারবার হয়েছে। প্রতিমুহূর্তে থ্রেট আসে। জীবন দেয়ার মালিক আল্লাহ, নেবার মালিকও আল্লাহ। আর মাথানত করি আল্লাহর কাছে, সেজদা দিই। আর কারও কাছে মাথানত করি না।
২১শে আগস্টের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ওই সময় সরকার নির্লিপ্ত ছিল। সংসদে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপি কথা বলতে দেয়নি। বরং খালেদা জিয়া ব্যাঙ্গ করে বলেছিলেন, আপনাকে কে মারতে যাবে। আমি নাকি ব্যানেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়। তারা রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে বলে এটি বিদেশিদের কাজ। এরপর শুরু হলো জজ মিয়া নাটক। গ্রেনেড হামলায় অনেকে আহত হন। এর মধ্যে আইভি রহমানকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় সিএমএইচ-এ। তার ছেলেমেয়েরাও হাসপাতালে মাকে দেখতে যায়। কিন্তু খালেদা জিয়া আইভী রহমানকে দেখতে যাবেন বলে তাদেরকে এক ঘরে লক করে রাখা হয়। খালেদা জিয়ার বের হওয়ার পরই আইভী রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আসলে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা ছিল ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায়।
স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয় বলে একটা কথা আছে: প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা হচ্ছে আমার লক্ষ্য। আমরা প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছি। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেন সঠিকভাবে চলতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছি। স্বাধীনভাবে চলতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। স্বাধীনতা ভালো তবে তা বালকের জন্য নয় বলে একটা কথা আছে। কারও বালকসুলভ আচরণ আমরা আশা করি না। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা আছে তা থাকুক। আর সেই ধারাবাহিকতা থাকবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি ক্ষমতায় থাকলে। আর রাজাকার, আলবদর আর শান্তিকমিটির মেম্বাররা ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কোনদিন ছিল না আর থাকবেও না। ২১ বছর এদেশের মানুষ সেই কষ্ট ভোগ করেছে। আর এদেশের মানুষ পুনরায় সেই কষ্ট করুক আমরা আর তা চাই না। সারাবিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ মর্যাদা পেয়েছে। সম্মান পেয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তাই বাংলাদেশের এই উন্নয়নের গতিধারা অবশ্যই থাকবে।
আলোচনা সভার আগে প্রধানমন্ত্রী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সামনে অস্থায়ী স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ২১শে আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কার্যকরী সভাপতি মইনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং লেখক ইমদাদুল হক মিলনও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
