১৬ বছরের কিশোরী। আমেনা খাতুন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এই বয়সেই তাকে সংসারের হাল ধরতে বিদেশ পাড়ি জমাতে হবে। তাকে পাঠাতে পারলে লাভবান হবে দালালও। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার বয়স। তাই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভূয়া জন্মনিবন্ধনের সার্টিফিকেট এনে পাসপোর্ট করানো হয়েছে। তারপরই গৃহকর্মীর কাজে তাকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ কাজে অবশ্য তাকে দালাল নিজেই বুদ্ধি-পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে। আবার মর্জিনা বেগম পঞ্চাশোর্ধ। স্বামী নেই। দুই সন্তান। তিনিও দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার ক্ষেত্রেও বয়সই বাধা। এখানেও মুশকিলে আছান হয়ে আসে সেই দালাল। ভূয়া জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটে বয়স কমিয়ে দেয়া হয়েছে তার।

এভাবেই কিশোরী থেকে রাতারাতি হয়ে ওঠছেন ২৫ বছরের যুবতী। আবার ৫০-৬০ বছরের বৃদ্ধাও বয়স কমিয়ে হয়ে যাচ্ছেন যুবতী। দালাল এবং ইউনিয়ন পরিষদের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে চলছে এই ভূয়া সার্টিফিকেটের কারসাজি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংসংস্থান মন্ত্রণালয়ও তাদের দায় এড়াতে পারে না। কারণ, বিদেশ যাওয়ার চূড়ান্ত ছাড়পত্র তারাই দেয়। তাদেরও দায় রয়েছে বয়স যাচাই-বাছাইয়ের।

শুধু আমেনা খাতুন বা মর্জিনা খাতুন নয়, গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যারা বিদেশ যাচ্ছেন, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই কারসাজি করে বয়স বাড়ানো-কমানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবসহ মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নিপীড়ন চালানোর কথা প্রায়ই গণমাধ্যমে ওঠে আসছে। যারা গৃহকর্তার নিকট থেকে পালাতে পারছেন, তাদের বর্ণনায় ওঠে আসছে লোমহর্ষক কাহিনী। এই সকল নির্যাতনের শিকার নারীদের একটি বড় অংশ অল্প বয়সী।

নারী অভিবাসনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত বয়স ২৫-৪৫ বছর। কিন্তু তাদের একটি বড় অংশই ২৫ বছরের নিচে। দালালরা অল্প বয়সী এসব নারীদেরকে ২৫ বছর বা তার বেশি দেখিয়ে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিচ্ছে। এদিকে জন্মনিবন্ধন থাকার কারণে হরহামেশাই তারা পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে।

পরবর্তী ধাপে মেডিকেল পরীক্ষাতেও পার পেয়ে যাচ্ছে এসব নারীরা। যেহেতু মেডিকেল পরীক্ষায় বয়স নির্ণয় বাধ্যতামূলক না। আর জনশক্তি ব্যুরো থেকে প্রশিক্ষণ ও ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে সহজেই।  তাদের ভাষ্য, এক্ষেত্রে তারা অসহায়।

বিদেশ যাওয়ার শেষ ধাপ বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন। তারাও অন্যদের ওপরে দায় চাপিয়ে দায় সারছেন।

এমন দায়িত্বহীনের বলি হয়েছেন সীমা, আদুরী, জিয়াসমি, তুলির মতো ১৪-১৫ বছর বয়সী অসংখ্য কিশোরী। যারা শিশু থেকে দালালদের কারসাজিতে হয়ে যাচ্ছে ২৫ বছর বয়সী নারী। আর স্বপ্নের প্রবাস থেকে ফিরতে হচ্ছে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে, কারও অঙ্গহানী হচ্ছে আর কেউবা দেশে ফিরছেন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে।

অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা উন্নয়নকর্মীরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বয়স নির্ণয় পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক করা দরকার। ২৫ বছরের নিচে নারীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষায় আনফিট দেখানোর বিধান চালু হলে অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031