আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিস  রামপালে তাপ বিদ‌্যুৎকেন্দ্র হলে ভয়াবহ বিপর্যয় হবে বলে জানিয়েছে । সংস্থাটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ‌্যুৎকেন্দ্রের কারণে বায়ু দূষণ হবে। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হবে। এছাড়া স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার, বয়স্কদের শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেবে।

রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্ভাব্য বায়ু দূষণ, বিষাক্ততা ও মানব দেহের উপর প্রভাব শীর্ষক আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিচালনা করেন গ্রিনপিসের কয়লা ও বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ লরি মাইলিভিরতা।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে শুক্রবার সকাল ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৫পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রামপালে প্রস্তাবিত ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের বায়ু দূষণের মধ্যে বৃহত্তর একক উৎস হবে। এটি সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমসহ দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ এবং খুলনা, অশোকনগর, কল্যাণগড়, সাতক্ষীরা বেগমগঞ্জ, বশিরহাট, নরসিংদী, নোয়াখালী, বাসীপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের উপরের বাতাসে বিষাক্ত ধূলিকনার মাত্রা অধিকতর খারাপ করে দেবে। ঢাকা ও কলকাতার বাসিন্ধারা বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বায়ু দূষণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হবে।

এতে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্গমন স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার, বয়স্কদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ, শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হলে ছয় হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু এবং ২৪ হাজার শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করবে।

গ্রিনপিসের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে উচ্চ মাত্রায় শক্তিশালী স্নায়ুবিষ পারদ উদগীরণ হবে। যা শিশুদের মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে। রামপাল হতে অবক্ষেপিত পারদ, বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার মাছ খাওয়ার অযোগ্য হবে। এই পারদ সুন্দরবন ও বঙ্গপোসাগরের জলজ খাদ্য চক্রকে ঝুঁকিতে ফেলবে। এটা লাখ লাখ মানুষের উপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে যারা মাছ ও   জলজ প্রাণী খাবে।

বৈঠকে লরি মাইলিভিরতার গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মানবাধিকারকর্মী ড. সুলতানা কামাল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে রামপালের বিরুদ্ধে বলছি। কিন্তু আমরা তো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি।’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে জাতিকে অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হবে। যে অঞ্চলগুলোতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে সেসব এলাকার ছেলে-মেয়েরা হবে মেধাশূন্য। সরকার ক্ষমতায় আছে বলে যা ইচ্ছে তাই করবে এটা তো ঠিক না। তারা আমাদের সত্য তথ্য দিচ্ছে না। সরকার বলছে আমাদের অভিযোগের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এটা পুরোটাই ভিত্তিহীন।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নাজমুল নাহার বলেন, ‘আমারা শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে। কিন্তু সেটার সুফল পেতে না পেতেই আবার সেই দিকেই যাচ্ছি। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে বাচ্চারা কম ওজন নিয়ে জন্মাবে। প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাবে।’

সুন্দরবনের কাছে রামপালে প্রস্তাবিত এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে করা হচ্ছে। এটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। প্রতি বছর প্রায় পঞ্চাশ লাখ টন কয়লা এটিতে ব্যবহার করা হবে। ২০১৮ সালে কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা।

বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরা এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন রামপালের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।

তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে এই প্রকল্প বাতিলের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031