সরকার ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় ‘পলাতক’ তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল । আর তিনিই এই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ার‌ম্যানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন।

রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হলেন আবুল কালাম মো. আকতার হোসেন। আজ  সোমবার তিনি প্রথম দিনের মতো তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন। আগামীকালও তিনি তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তি দেবেন আদালতে।

এই মামলায় এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘তারেক রহমানের এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন তা আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালতের কাছে তারেক রহমানের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন জানানো হয়েছিল।’

তবে তারেকের আইনজীবী বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সুপ্রিতিষ্ঠ করতে পারেননি। মামলায় তারেক রহমানের খালাস চাইবেন তিনি।

ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন জেলখানার সামনে একটি পুরনো ভবনে ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে বিচারকাজ চলছে।

তারেকের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী বলেন, ‘এ মামলায় ৪০৮ জন সাক্ষীর কেউই তাদের জবানবন্দিতে তারেক রহমানের নাম বলেনি। ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হয়।’

‘মামলাটির এজহারে দায়ের করা হয়েছে তখন এবং পরবর্তী পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ চারটা জিডি করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তারা অভিযোগ হিসেবে দায়ের করেছিলেন। পরে জিডি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। সেখানে উনার (তারেক রহমান) নাম ছিল না। পরবর্তী পর্যায়ে এক থেকে পাঁচ নম্বর আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) ৪০৮ জন সাক্ষী সম্বলিত একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল সেখানেও উনার নাম ছিল না। সেখানেই এই মামলার ঘটনার উৎস, গ্রেনেডের উৎস, আসামিদের সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন বিষয়গুলো এখানে ছিল।’

‘পরবর্তীকালে উনি (তদন্ত কর্মকর্তা) একটা ইনভেস্টিগেশন করেছেন, সেখানে হাওয়া ভবনের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। উনি একটা খসড়া মানচিত্র তৈরি করেছিলেন, সেখানে স্থানীয় কোনো সাক্ষী নাই। আশেপাশের কোনো সাক্ষীরও সম্পৃক্ততা নাই। এ কারণে আমরা মনে করছি রাজনৈতিকভাবেই তাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একবার এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আরেকবার তদন্ত হয়েছে মামলাটির। আর এই তদন্তেই তারেক রহমান আসামি হয়েছেন।

এই মামলার আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের জবানবন্দির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছে যেখানে তিনি গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় তারেকের অংশগ্রহণের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য একটি মামলায়। তাই গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামির তালিকা থেকে তার নাম বাদ গেছে।

মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে বলেন, হাওয়া ভবনে একাধিক বৈঠকে তারেক রহমান, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ কয়েকজন এই হামলার ছক কষেছেন।

এ বিষয়ে তারেকের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী বলেন, ‘গ্রেনেড হামলা যখন হয় তখন তারেক রহমান বিএনপির নেতৃস্থানীয় কোনো লোক ছিলেন না। তিনি এমপি ছিলেন না। তিনি প্রশাসন যন্ত্রের সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না। সেখানে উনি এই নির্দেশ দেয়ার কোনো ক্ষমতা রাখেন না।’

‘হাওয়া ভবনটা তারেক রহমানের কার্যলয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের কোনো কার্যালয় ছিল না। সেটা ছিল বিএনপির কার্যালয়। তারেক রহমানের যে কথাটা বলা হয়েছে যে, তিনি সেখানে উপস্থিত থেকে তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে পারেন না। কারণ এ ধরনের ক্ষমতা তো তার কাছে ছিল না।’

তারেকের আইনজী বলেন, ‘মুফতি হান্নানকে ২০০৫ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে উনাকে সিলেটে সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলায় তাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে। পরবর্তীতে তিনি রমনা বটমূলের একটা মামলায় ১৬৪ ধারায় একটা জবানবন্দি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সেই ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উনি কোথাও বলেন নাই, অন্যান্য সাক্ষীরা বা মুফতি হান্নান কোথাও বলেন নাই যে উনি (তারেক রহমান) এই মামলায় সম্পৃক্ত আছেন।’

‘সেখানে বলা হয়েছিল কীভাবে ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, গ্রেনেডগুলো কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল, কোথায় সেগুলো রাখা হয়েছিল, কীভাবে সরবারহ করা হয়েছিল এবং ২১ আগস্ট যারা এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, অর্থাৎ বোমাগুলো যারা মেরেছে তাদের নামগুলো সেরকমভাবেই আসছে।’

‘পরবর্তীকালে মুফতি হান্নান সেটি প্রত্যাহারের জন্য একটি আবেদন করেছেন তা পেইন্ডিং আছে আদালতে।’

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। পরের বছর চিকিৎসার জন্য ‘প্যারোলে’ মুক্তি পান তিনি। কিন্তু প্রায় ১০ বছরেও তিনি দেশে ফেরেননি। এই সময়ের মধ্যে তোরেক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ দুর্নীতির একাধিক, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে কটূ্ক্তি অভিযোগে বহু মামলার আসামি হয়েছেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031