বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘকে সঠিক পথে রাখতে বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শান্তি স্থাপনসহ বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় । এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতিসংঘ যেন দুর্বল না হয় সেই আহ্বান জানান তিনি।

সোমবার (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকালে) জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে শুরু হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যোগ দিচ্ছেন।

ভার্চুয়াল বক্তৃতায় জাতিসংঘকে দুর্বল করে এমন ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমোদন না দেয়ারও আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘকে দুর্বল করে এমন কোনো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমোদন দেয়া উচিত নয়। আমরা এটা পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পেয়েছি। এ জন্য তাদের কাছে আমরা ঋণী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদেরও জাতিসংঘকে একটি সত্যিকার অর্থে সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক কার্যকরী সংস্থায় পরিণত করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ‘আমি বলতে চাই যে, ‘আমরা এমন অনেক মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করেছি, যা আমাদের মানবসভ্যতার নতুন ইতিহাস গড়ে তুলেছে। ইউএনজিএ-৭৫ এ ধরনের আরেকটি মুহূর্ত আমাদের সামনে এনে দিয়েছে।

করোনা মহামারি আমাদের ২০৩০ এজেন্ডার লক্ষ্য অর্জনকে আরও কঠিন করে দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলমান মহামারিসহ বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ ধরনের সংকট মোকাবিলার অক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেছেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব- সবার কাছেই জাতিসংঘের প্রয়োজনীয়তা যে এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, করোনাভাইরাস মহামারি তা দেখিয়ে দিয়েছে। আর সে কারণেই ভূ-রাজনৈতিক বৈরিতা থেকে জাতিসংঘকে দুর্বল করার চেষ্টা মেনে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববাসীর কল্যাণ ও উন্নয়নে জাতিসংঘের সব কর্মীর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও নিবেদনের প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের অনেক ঋণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টাসমূহ থেকে আমরা উপকৃত হয়েছি। আমাদের দিক থেকেও জাতিসংঘকে তার ম্যান্ডেট পূরণে আমরা ভূমিকা রাখছি।’

বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে জাতিসংঘের সব শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সৈন্য ও পুলিশ সদস্য থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের দেড়শ শান্তিরক্ষীর জীবন উৎসর্গের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব মানবতার কল্যাণে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার প্রত্যাশা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সাথে একই সময়ে হওয়ায় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, জাতিসংঘ ভবিষ্যতে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। এটা জাতিসংঘ ও বহুপাক্ষিকতার ওপর বাংলাদেশের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রমাণ।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য আমি জাতিসংঘের সকল কর্মকর্তা ও সংস্থার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031