কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং সারা দেশের মহানগর, জেলা ও থানা পর্যায়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারা দেশেই পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আরো তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া প্রথম বৈঠক করেছেন নেতারা। বৈঠকে টেলিফোনে যুক্ত হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নেতাদের পরবর্তী করণীয় নিয়ে নির্দেশনা দেন।
এদিকে দুপুরে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের কাছ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করে বিএনপি। মিছিলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শহীদুল ইসলাম বাবুল, হারুনুর রশীদ, আ ক ম মোজাম্মেল হক, খান রবিউল ইসলাম রবিও উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে ফকিরাপুলের কাছে গেলে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিলটি। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া, ঢাকা মহানগরীর মধ্যে দুপুরে হাউজ বিল্ডিংয়ের গলি থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে। সেখানে অংশ নেন যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু। মিছিলটি ফকিরাপুল পানি ট্যাঙ্কির কাছে গেলে হাজার খানেক নেতা-কর্মী যোগ দেন। এ সময় মিছিলের সামনে আসেন মির্জা আব্বাস, জয়নুল আবদিন ফারুক ও বরকত উল্লা বুলু। মিছিলটি পানির ট্যাঙ্ক অতিক্রম করে ২০ গজ পেরুনোর পর পুলিশ পেছন দিক থেকে ধাওয়া দিয়ে কয়েকজনকে আটক করে। এদিকে বিজয়নগর থেকেও একটি মিছিল বের হলে সেখান থেকে নগর বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবীসহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। এর বাইরে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় মিছিল বের করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বিকেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান জিমি, ওলিউদ্দিন, তাহের, রাশেদ, জাহিদ, ৫২নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ফারুক, শ্যামপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সেন্টু মেম্বার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা হারুন অর রশিদ হারুন, মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী দলের নেতা তাওলাদ হোসেনসহ ৪০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আজ দুপুরে মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা শাহীনসহ ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ ১৩ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নেত্রকোনায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফা জেসমিনসহ ৫ জন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা জিয়া পরিষদের আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির উপদেষ্টা শফিউল আলম আকন্দকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন বানোয়াট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসত্য মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান তিনি।
এদিকে নয়াপল্টন থেকে শুরু হওয়া মিছিল ফকিরাপুলের কাছে গেলে সেখান থেকে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে বলে স্বীকার করেছে। আটকরা হলেন- শহিদ, কবির, আলম, সাহেদ আলী, নজরুল ইসলাম, রুবেল ও শফিক। অন্যদের নাম জানা যায়নি। তবে সেখান থেকে বিএনপির উল্লেখযোগ্য নেতা আটক হয়নি। পল্টন থানার ডিউটি অফিসার মোসা. সুলতানা মানবজমিনকে জানান, নাশকতার আশঙ্কায় সকাল থেকেই বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। দুপুর বেলায় বিএনপির কার্যালয় থেকে মিছিল বের করলে পুলিশ সেখান থেকে ১২ জনকে আটক করে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। অপরদিকে, দুপুর দেড়টার দিকে একই সময়ে দৈনিক বাংলা থেকে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়। আটকদের নাম জানা যায়নি। মতিঝিল থানার এসআই দীলিপ কুমার মানবজমিনকে জানান, মিছিল থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে তারা কোন পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মী। অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা দায়ের করা হবে।
খালেদাকে ছাড়া প্রথম বৈঠক, নির্দেশনা দিলেন তারেক
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া প্রথম বৈঠক করলেন নেতারা। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে লন্ডন থেকে টেলিফোনে নেতাদের নির্দেশনা দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের একাকী একটি নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তাকে ডিভিশন প্রদানের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। অন্যথায় তার কিছু হলে এর দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, আজকে পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আপনারা শুনে বিস্মিত হবেন, তাকে সম্পূর্ণ নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছে। এভানডেন্ট যে কেন্দ্রীয় কারাগার ছিল, যেটাতে এখন কেউ বাস করে না, যার ঘর-বাড়িগুলো পড়ে যাচ্ছে, স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। সেই কারাগারে তাকে সম্পূর্ণ একা একজন প্রিজনার হিসেবে রাখা হয়েছে। শুনলে আপনারা বিস্মিত হবে, ব্যথিত হবে সারা জাতি যে, তাকে (খালেদা জিয়া) কোনো ডিভিশন এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমরা অবিলম্বে তাকে ডিভিশন দিয়ে তার প্রাপ্য যে মর্যাদা ও সব সুযোগসুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা তারা ওইভাবে এখন পর্যন্ত করেনি। ৭৩ বছরের একজন বয়স্ক মানুষ তার যে সার্বক্ষণিক পরিচারিকা যেটা জেল কোডের মধ্যে রয়েছে। সেই পরিচারিকাকেও তার সঙ্গে থাকতে দেয়া হয়নি। এই বিষয়গুলো সম্পূর্ণ অমানবিক। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ নেতাদের এই বৈঠক হয়। রাত ৮টার দিকে বৈঠকস্থল থেকে এসে মহাসচিব সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। মির্জা ফখরুল জানান, বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৈঠকে মোবাইলে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য শুনানো হয়। মহাসচিব বলেন, দলের অ্যাকটিং চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান টেলিফোনের মাধ্যমে তার বক্তব্য জানিয়েছেন। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবার জন্য। একই সঙ্গে তিনি দেশে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশ গ্রহণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন। ফখরুল জানান, সভায় খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদানের নিন্দা এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সারা দেশে গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবির সিদ্ধান্ত হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বৈঠকে বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য দেন। বেশির ভাগ বক্তার কাছে থেকে যে বিষয়টা আসছে তাহলো দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। এ সভায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন দলকে তা অনুপ্রাণিত করবে। বেগম জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার জন্য দেশবাসী ধিক্কার দিয়েছে, তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে নিপীড়ন-নির্যাতন উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আইনজীবীদের মাধ্যমে দেশনেত্রী কোনো বক্তব্য বা বার্তা দেননি। আইনজীবীরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার কারাগারে যাবার পর দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও যুগ্ম মহাসচিবদের এটি প্রথম বৈঠক।
এতে দলীয় প্রধানদের মুক্তিতে ‘আইনগত পদক্ষেপ’ এবং ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’-এর কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সভাপতির আসনটি খালি রাখা হয়। সভাপতির আসনে এক পাশে বসেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অপর পাশে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত ?উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর নাসির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী ও শওকত মাহমুদ। চেয়ারপারসনের ?উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আ ন হ আখতার হোসেইন, জয়নুল আবদিন ফারুক, কামরুল ইসলাম, এসএ কাইয়ুম, সুজাউদ্দিন, আবদুল রশিদ, শাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, এনামুল হক চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, শাহজাহান মিঞা, বিজন কান্তি সরকার, তৈমূর আলম খন্দকার, আবদুস সালাম, মোহাম্মদ শাহজাদা মিয়া, আমিনুল হক, মামুন আহমেদ, আবদুল হালিম ডোনার, আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হারুনুর রশীদ এবং বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বৈঠকে অংশ নেন।
বিএনপির তিন দিনের নতুন কর্মসূচি
স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে দলটি। গতকাল বিকাল চারটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন, মঙ্গলবার অবস্থান ধর্মঘট এবং বুধবার সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি। রিজভী বলেন, অবস্থান কর্মসূচি হবে এক ঘণ্টা। জেলাগুলো সুবিধামতো সময়ে তা করবে। ঢাকায় অবস্থানের স্থান পরে জানানো হবে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে দলীয় নেতাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার মামলায় শাস্তি দিয়ে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানোর পর বিএনপি দুদিনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছিল। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্লেমগেম খেলছে। পুলিশ নিজেরাই নাশকতা করে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগরীর ভেতর থেকে মোট ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটায় আরো ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এছাড়া সারা দেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কোনো কর্মসূচিতে আমরা বিশৃঙ্খলা করছি না। বিএনপি সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করছে। কিন্তু সেখানে পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নানা নাশকতার মাধ্যমে ব্লেমগেম খেলছে। পুলিশ নিজেরাই নাশকতা করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে আমাদের উস্কানি দিতে চাইছে। এসময় তিনি বলেন, পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। এই গুণ্ডামির জন্য তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে। তারা পার পাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, আবদুল হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল কবির, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
