সওকত মাহমুদ চৌধুরী।সরকারী কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরি করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে।পড়ালেখা শেষ করে যে বয়সে অধিকাংশ যুবক নিজের ক্যারিয়ার গঠনের দৌড়ে ব্যস্ত।সে সময়ে সওকত পাশে দাড়ালেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে।
মাস তিনেক আগের কথা।নগরীর আগ্রাবাদ সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের সামনে অফিস শেষ করে ঘুরতে গেলেন শওকত।সিঙ্গাপুর মার্কেট চত্বরে সুবিধা বঞ্চিত কিছু শিশুকে দেখে তার মায়া হয়।নিজেকে কিছুক্ষন সেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুর দলে ভাবলেন।তখন মনে হলো এ অবস্থায় যদি কেউ তার পাশে দাড়াতেন তাহলে সেটা কত মহৎ কাজই না হতো।বিবেকের তাড়নায় সিদ্ধান্ত নিলেন সমাজের পিছিয়ে পড়া এই শিশুদের জন্য কিছু করার।নেমে গেলেন শিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কাজে।
সপ্তাহের ছুটির দিন শনিবারে সিঙ্গাপুর মার্কেট বন্ধ থাকে।সেই সুবাধে সিঙ্গাপুর মার্কেটের সামনে বসে পড়েন ছিন্নমূল এই শিশুদের নিয়ে।গত তিন সপ্তাহ ধরে মার্কেট বন্ধ থাকায় সেখানে শিশুদের শিখাচ্ছেন অ আ ও ক খ।শুধু কেবল মুখে শেখাচ্ছেন তা নয়,বরং নিজের নাম,পিতা-মাতার নাম ও ঠিকানা লেখাও শিখাচ্ছেন।শিশুদেরকে মনযোগী করতে পড়া শেষ করার পর চা-নাস্তার ব্যবস্থাও রেখেছেন।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা ‘নগরফুল’ নামের একটি সংগঠনের সাথেও জড়িত আছেন। সপ্তাহে একদিন নগরীর সিআরবি ও ষোলশহর স্টেশনের মাঠে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে বসেন।এতেও নিজের নাম পিতা-মাতার নাম ও ঠিকানা শিখানো হয়।আর এ কাজটি চালিয়ে নেয়ার জন্য প্রতিমাসে একশত টাকা করে চাঁদা দেন।আর এগুলো ব্যয় করা হয় শিশুদের খাতা,কলম,বই ও নাস্তার খরচের জন্য।
সজিব নামের আট বছরের ছেলে পড়তে এসেছিলেন সিঙ্গাপুর মার্কেট চত্বরে।বাবা এনসিটি জাহাজ কাটার শ্রমিকের কাজ করে। প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশনা করানোর পর সজিবের পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম।পড়াশুনা কেমন লাগছে জানতে চাইলে সিটিজি নিউকে সজিব বলে,আব্বা এনসিটি জাহাজ ভাঙ্গার কাজ করে টাকার অভাবে স্কুলে পাঠাতে পারে না।গত দুই শনিবারেও আসছিলাম আজও আসছি, পড়ালেখা শিখার জন্য।আমার খুব ভালো লাগছে।
পড়তে আসা আরেক শিশু কাউছার।বয়স ৮-৯ বছরের কোঠায়।ছোট ভাই নুরুন্নবীকে (৭) নিয়ে সাথে।তার বাবা অন্ধ।বাবার অন্ধত্বের কারনে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন কাউছার।প্রত্যেকদিন সকালে আগ্রাবাদ এলাকার মগ পুকুর পাড়ে মাছ বিক্রেতাদের সাথে কাজ করে সে।
কাউছার সিটিজি নিউজকে বলেন,‘প্রতিদিন মাছের দোকানীদের সাথে কাজ করি। শনিবার বিকালে এখানে পড়তে আসি। পরিবারে অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। নিজের নামটি পর্যন্ত লিখতে জানিনা। বিকাল থেকে মার্কেটের সামনে লেখা শিখতেছি।’
শরীফ নামের আরেক শিশু এসেছিলেন বেলুন বিক্রি করতে।বেলুন বিক্রির ফাঁকে বসে পড়লেন সওকতের পাঠশালায়।থাকেন আগ্রাবাদ এলাকার বস্তিতে।রিক্সা চালক বাবার রোজগারে শামিল হতে বেছে নিলেন বেলুন বিক্রির কাজ। একটি ছেলে বেলুন বিক্রি করে।
জানতে চাইলে সওকত সিটিজি নিউজকে বলেন,বিবেকের তাড়না থেকে আমি এ কাজ করে যাচ্ছি।যাতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।নৈতিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যদি প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আষে তাহলে অনেক কিছু করা সম্ভব।
